২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
র্যাবের আমদানি আটকে যাওয়া

নৈতিক ভিত্তি পুনরুদ্ধার করুন

-

সহযোগী একটি দৈনিকের প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আমদানি আটকে গেছে। অনুসন্ধানী ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দু’টি এলসির বিপরীতে সাইপ্রাস থেকে ২১ কোটি টাকার ‘নজরদারি যন্ত্রপাতি’ প্রস্তুত রয়েছে। সেগুলো দেশে আনা যাচ্ছে না। আরো দু’টি এলসির বিপরীতে ৩২ কোটি টাকার একই যন্ত্রপাতি দেশে এলেও বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। মোট ৯টি এলসি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে র্যাব।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এই বাহিনীর নামে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে প্রথম দিকে আমাদের সরকার ওই নিষেধাজ্ঞায় গুরুত্ব দিতে চায়নি। প্রচারণার জোরে পরিস্থিতি উতরানোর চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত এর প্রভাবে সংস্থাটির প্রয়োজনীয় কেনাকাটা আটকে গেল এবার।
পত্রিকাটি চারটি কেনাকাটার বিস্তারিত তথ্য উল্লেøখ করেছে। মোবাইল ফোনে নজরদারি, ব্যক্তির অবস্থান শনাক্তের কাজে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি প্রযুক্তিপণ্য সাইপ্রাস থেকে ক্রয়ের চুক্তি করেছে র্যাব। সেগুলো দেশে আনতে পারছে না। পণ্য কেনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। এমনকি চীনের মতো দেশ থেকেও পণ্য আমদানি আটকে গেছে। র্যাবের আমদানি-পণ্যের মূল্য পরিশোধে জটিলতা নিয়ে দেশীয় ব্যাংকগুলো ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কোনো নির্দেশ দেয়নি। পণ্য কেনাবেচায় মূল্য পরিশোধে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা ডলারকেন্দ্রিক। মূলত যুক্তরাষ্ট্র থেকে এটি নিয়ন্ত্রিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের লেনদেন এখনো এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এখানে প্রতিষ্ঠিত আইন রয়েছে। কোনোভাবে সেগুলো ভাঙতে পারে না এর অধীন দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা আমাদের মতো দেশের বিরুদ্ধে শতভাগ পরিপালনের পরিস্থিতি রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে সহযোগী ব্যাংক কালো তালিকাভুক্ত হয়।
মনাবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে সাত কর্মকর্তার ওপরও এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারা। প্রতিষ্ঠানটির কেনাকাটা আটকে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আগে। বোঝা যাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগে থেকেই শুরু করে। ঘোষণা করে গত বছরের শেষে। পণ্য ক্রয়কারী হিসেবে বাংলাদেশী পক্ষে নাম রয়েছে র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালকের। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে নিজের ও এর কোনো অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আর কিছু ক্রয় করতে পারবে না। র্যাবের নামে নতুন কোনো এলসি খোলা যাবে না। পত্রিকাটি এ ব্যাপারে বিস্তারিত লিখেছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি দেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত। গুম-খুন ও হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো কোনো প্রতিকার পায়নি। এমনকি এ নিয়ে খবর প্রকাশও হয়নি সঠিকভাবে। অন্য দিকে প্রতি মাসেই বিচারবহির্র্ভূত কর্মকাণ্ড চলে ক্রবর্ধমানভাবে। মানুষজন ছিল একধরনের অসহায়। সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেনি। তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টি কেড়েছে এবং তারা এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিটিতে তা আলোচিত হয়। এসব ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের প্রতিকার পেতে বাংলাদেশ সফরের চেষ্টা চালায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকার তাতেও সায় দেয়নি।
র্যাব দেশের আইনশৃঙ্খলায় নিযুক্ত একটি এলিট ফোর্স। এ বাহিনী সম্পূর্ণ নিজ রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ। সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবহার করতে গিয়ে নানাবিধ ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। মানবাধিকার সংক্রান্ত অভিযোগগুলো এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিকার করতে শেষ পর্যন্ত সরকার ব্যর্থ হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে প্রতিরোধ এসেছে। অর্থাৎ র্যাবের দেশীয় দায়বদ্ধতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে গেল।
র্যাব ও এর কিছু ব্যক্তির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উত্থাপিত অভিযোগের ন্যায়নিষ্ঠ সুরাহা হওয়া। নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রতিষ্ঠানটি হয়তো কিছু দিন ভুগবে; কিন্তু এর নৈতিক অবস্থান নিয়ে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে সেটি দূর করা না গেলে এর ভিত্তিই থাকে না। সুতরাং আইনশৃঙ্খলাবাহিনী হিসেবে এর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এর ভেতর থেকে নিরাময়ের উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের উচিত সে দিকে শতভাগ আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানো।

 


আরো সংবাদ



premium cement