গরিবের পক্ষে কেউ নেই
- ১২ মার্চ ২০২২, ০০:০০
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকায় মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে সংসারের প্রয়োজনীয় ১০টি পণ্যের দাম ফের বেড়েছে। এগুলো হলোÑ মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল, মসুর (চিকন) ও অ্যাংকর ডাল, দেশী পেঁয়াজ, আমদানি করা রসুন, খোলা আটা ও প্যাকেট ময়দা, লবণ এবং ফার্মের মুরগির ডিম। দাম কেজিতে দুই টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে প্রতি হালিতে চার টাকা। এতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
এই অবস্থায় এ কথা বলা অসঙ্গত নয় যে, দেশে গরিবের পক্ষে যেন কেউ নেই। পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে; তা বোঝা যায় অর্থমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যেও। যদিও সরকার এতদিন বিষয়টি তেমন আমলে নেয়নি। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য ভ্যাট তুলে নিয়েছি। সারা দেশে টিসিবির মাধ্যমে জনগণকে স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহ করা হবে। এতে এক কোটি পরিবার সাশ্রয়ী মূল্যে এসব পণ্য পাবে। সরকার থেকে যে পরিমাণ সহযোগিতা করা দরকার, সেটি করা হচ্ছে। ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলায় ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে।’
সবচেয়ে বেশি অরাজক অবস্থা ভোজ্যতেল নিয়ে। বিশ্ববাজারে বাড়তি দামের ভোজ্যতেল ও চিনি বাংলাদেশে আমদানি না করেই অসাধু ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে চলমান মূল্য ধরে দেশের বাজারে পণ্য বিক্রি করেছেন। অথচ এসব পণ্য আগেই কম দামে আমদানি করা। গত মঙ্গলবার পাইকারিতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ১৬৪ টাকা ৭০ পয়সা এবং পাম তেলের দাম ১৪৫ টাকার কিছু বেশি ছিল। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে যে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে এর প্রমাণ রয়েছে। রোজার আগে তেল আমদানি বেড়েছে। দেশে গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে সয়াবিন ও পাম তেল মিলিয়ে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে তিন লাখ ৮৮ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬০ হাজার টন বেশি। সয়াবিন তেল উৎপাদনের কাঁচামাল সয়াবীজও ৩৯ হাজার টন বেশি আমদানি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও স্বল্পতার দোহাই দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির পরিবেশকরা তেল নিয়মিত সরবরাহ করছেন না। ফলে খোলা সয়াবিন তেল ও পাম সুপার তেল বাজারে যাও-বা পাওয়া যাচ্ছে তা বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে। কারসাজি যে করা হয়েছে তার আরেকটি প্রমাণ হলোÑ ভোজ্যতেল মিলমালিক এবং ডিলারদের নিয়ে গত বুধবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকের পর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বলেছে, বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের বাড়তি দাম নিয়ে গত ১৫ দিনে আনুমানিক প্রায় এক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
টিসিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০ সালের ৯ মার্চ রাজধানীর বাজারে এক কেজি মোটা চাল ২৬ টাকা, ডাল ৭৫ টাকা, খোলা আটা ২১ টাকা ও চিনি ৪৮ টাকা; এক লিটার খোলা পাম তেল ৬৫ টাকা ও ডিমের ডজন ৭২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তখন রাজধানীতে তিনজনের একটি সংসার চালাতে মাসে ৩০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল, দুই লিটার তেল, তিন কেজি আটা, এক কেজি চিনি, দুই কেজি পেঁয়াজ ও আড়াই ডজন ডিম কিনতে খরচ করতে হতো এক হাজার ৪৬২ টাকা। ওই সাতটি নিত্যপণ্য কিনতে এখন খরচ হয় দুই হাজার ৪৭৩ টাকা। অর্থাৎ এক যুগে খরচ বেড়েছে ৭০ শতাংশের বেশি। এ সময়ে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৭৭ শতাংশ।
প্রশ্ন উঠেছেÑ সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার করলে এর সুবিধা কতটা পাবেন সাধারণ ক্রেতা? ব্যাপারটা এমন না হয়, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরকার ভ্যাট নিলো না; কিন্তু তেলের দামও কমলো না।
আমরা মনে করি, বাজারে যথাযথ নজরদারি জোরদার এবং সঠিক পরিকল্পনা নেয়া হলে পরিস্থিতি এত নাজুক হতো না। টিসিবির মাধ্যমে বাজারে সঠিকভাবে পণ্য বিতরণ করা হলে সিন্ডিকেটও গড়ে উঠতে পারত না। সেই কাজটি করা হচ্ছে না। সবকিছুর পরও সবার প্রত্যাশা, সরকার জনস্বার্থে যা যা করণীয় তাই করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা