২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভেজাল ওষুধে আলু নষ্ট

দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি চাই

-

সহযোগী একটি পত্রিকার রংপুর প্রতিনিধিরা জানান, সেখানে ক্ষেতে আলুর পচন রোধের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ওষুধে কমপক্ষে ৮০ জন চাষির প্রায় এক শ’ একর জমিতে আলু নষ্ট হয়ে গেছে। মহানগরের তাজহাট থানার সিলিমপুরসমেত পাঁচটি গাঁয়ের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজীবীরা এভাবে তাদের পুঁজি হারিয়ে হাহুতাশ করছেন। তারা ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অভিযোগ এবং চাষিদের বক্তব্য সূত্রে জানা যায়, গত মাসের প্রথম দিকে অকস্মাৎ বজ্রসহ বর্ষণ ও দমকা বাতাসে এলাকার আলুক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়। তখন গেটকো কোম্পানির ক্রপ হেলথ সুপারভাইজার ও অন্য কয়েকজন আলুক্ষেতে গিয়ে তাদের ‘জি সাইন ৫০ ডব্লিউপি’ নামের পচনরোধক ওষুধ আলুক্ষেতে দিতে বলেন। সে মতে, সিলিমপুর, দুর্গাপুর, ভরটপাড়া, কোলারপাড়া ও ফতেপুরের কৃষকরা ওই ওষুধ প্রয়োগ করেছেন। অথচ ওষুধে দৃশ্যত কাজ হয়নি। কারণ ক’দিন পরই আস্তে আস্তে আলুক্ষেতের দশা আরো খারাপের দিকে যায়। কোম্পানির লোকেরা তখন এসে বিভিন্ন অজুহাতে টালবাহানা করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ দিকে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা রংপুর শহরের তাজহাট থানায় এবং কৃষি বিভাগের স্থানীয় উপপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ পেশ করেন। ক্ষতিপূরণের জন্য এর কপি বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ৯ জনের কাছে দেয়া হয়।
সিলিমপুরের একজন চাষি বলেছেন, আলুগাছের পচে যাওয়া রোধ করার প্রয়োজনে ভুরারঘাট বাজারের একটি দোকান থেকে কিনে জমিতে দিয়েছিলাম ‘জি সাইন ৫০ ডব্লিউপি’ নামের ওষুধ। কিছু দিনের মধ্যে আলুগাছ পুড়ে যাওয়া পরিলক্ষিত হয়। ক্রমেই সব গাছ পুড়ে লুটিয়ে পড়ে। দুর্গাপুরের এক ব্যক্তির বক্তব্য, ‘১৫ একর জমির তাজা আলুগাছ লকলক করে বেড়ে উঠছিল। তখন আলুগাছের বয়স ৪৫-৫০ দিন। কিন্তু দু’বার ওষুধটি দিতে না দিতে গাছগুলো শেষ হয়ে গেছে। তিন মাসের আগে ক্ষেত থেকে আলু তোলা যায় না।’ একই অভিযোগ করে কোলারপাড়া ও ফতেপুরের কয়েকজন কৃষক বলেছেন, ওষুধটি দেয়ার পরে ঘাস ও গাছ ঝলসে গেছে। অথচ এনজিওর ঋণ নিয়ে আলু আবাদ করেছি। ক্ষতিপূরণ না পেলে গত্যন্তর নেই। অভিযুক্ত কোম্পানির সাফ কথা, ‘আমাদের ওষুধকে এ জন্য দায়ী করা যাচ্ছে না এখনই। ঢাকায় গবেষণাগারে গাছের নমুনা দেয়া হয়েছে। তাই এর রিপোর্টের ভিত্তিতে এ ব্যাপারে বলা যাবে।’ তাজহাট থানার পুলিশ ক্ষেতগুলো দেখেছে। কৃষি সম্প্রসারণের ডিজি বলেন, ‘কৃষকরা জানিয়েছে বহু দেরিতে। তবে প্রথমে ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষতিকর কিছুর ফলে এটা হয়েছে। মাটি, আলু এবং ওষুধের নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ অবশ্য কখন এ রিপোর্ট পাওয়া যাবে এবং কতদিন লাগতে পারে ব্যবস্থা নিতে, তা জানা যায়নি।
সবাই চাচ্ছেন আলুক্ষেতে এই বিপর্যায়ের জন্য যারা দায়ী তাদের উপযুক্ত শাস্তি। এ জন্য এর সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন প্রথমেই। এমনিতেই আলুচাষিরা দাম পাচ্ছেন না, তাই তাদের অন্তত ক্ষতিপূরণ দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement