২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিশ্ববাজারে গমের মূল্যবৃদ্ধি

নিত্যপণ্যের দিকে নজর দিন

-

চালের পরেই খাদ্যপণ্য হিসেবে গমের চাহিদা বাংলাদেশে বেশি। বিগত বছরগুলোতে গম থেকে তৈরি আটা-ময়দার চাহিদা আরো বেড়েছে। সাধারণত ভাতের ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি মানুষ ডায়াবেটিস ও মুটিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে গমের তৈরি রুটি খায়। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পর বিশ্ববাজারে গমের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে গমের দাম বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ইউক্রেনের সমুদ্রবন্দরগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অন্য দিকে রাশিয়ার পণ্য পরিবহনে বিশ্ব পরিসরে বড় ধরনের বাধা তৈরি হয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে শুধু গম নয় ভুট্টাসহ আরো কিছু পণ্য রফতানি হয়। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এসব পণ্যের সরবরাহ বড় মাত্রায় কমে যাবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। এসব খাদ্যপণ্যের বিকল্প উৎস থেকে সংগ্রহের পরিকল্পনা করতে হবে। একই সাথে এর উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণে এখন থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, বিশ্ববাজারে গমের দাম ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। বিভিন্ন হিসাবে দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের মূল্য এক সপ্তাহে ৩৭ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। অন্য দিকে যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে গত এক মাসের হিসাবে তা ৬২ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বের মোট গম রফতানির ২৯ শতাংশ সরবরাহ হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ভুট্টা রফতানিতে বিশ্বে দেশ দুটোর অংশ ১৯ শতাংশ। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বিগত অর্থবছরে বেসরকারিভাবে ৪৯ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। সরকারিভাবে আমদানি হয়েছিল চার লাখ ৭৮ হাজার টন। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেসরকারিভাবে আমদানি করা হয়েছে ২৩ লাখ ১০ হাজার টন গম। সরকারিভাবে এসেছে চার লাখ চার হাজার টন গম।
প্রাপ্ত তথ্য মতে দেখা যাচ্ছে, আগের অর্থবছরের তুলনায় অর্ধেক গমও আমরা আমদানি করিনি। ইতোমধ্যে আরো গম আমদানির চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছিল। সেগুলো এর মধ্যে আটকা পড়ে গেল যুদ্ধের কারণে। বোঝাই যাচ্ছে গমের সরবরাহ নিয়ে আমরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। এ ছাড়া অন্যান্য খাদ্যশস্যের দামও হু হু করে বাড়ছে। চালের দাম এক সপ্তাহে বেড়েছে প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ। চিনির দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ। দাম বেড়েছে পাম তেল ও সয়াবিনসহ নিত্য সব খাদ্যপণ্যের। আমাদের দেশে ইতোমধ্যে ভোজ্যতেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। গতকাল বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম বেড়েছে দুই শতাংশের বেশি। এক সপ্তাহে বেড়েছে চার শতাংশের বেশি। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে জ্বালানি তেলের ওপর। ব্যারেল-প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ ডলার। এ দিকে জ্বালানি তেলের মূল্যের সাথে প্রত্যেকটি পণ্যের মূল্য জড়িত। এর মূল্য বাড়লে সব পণ্যের দাম আপনা থেকে বেড়ে যায়।
খাদ্যপণ্য উৎপাদন সরবরাহ ও দাম নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, অচিরেই সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম আরো বাড়তে পারে। বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যার বিষয় হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেট। পণ্যমূল্য বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভর করে বাড়ে, কমে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি বাড়ে সিন্ডিকেটের কারণে। জোগান ও চাহিদার ওঠানামার সুযোগে তারা মানুষের পকেট কাটে। মজুদদারি করে পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে। রুশ আগ্রাসনের শুরুতেই বেশ কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে এই সিন্ডিকেটের কার্যক্রম দেখা গেছে। অযৌক্তিকভাবে বেশ কয়েকটি পণ্য ভোক্তাকে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এর সাথে রয়েছে বাজারের ওপর কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ না থাকা। খুচরা পাইকারি আড়তদার সরবরাহকারী সবাই এ সুযোগটি নিচ্ছে।
মনে রাখতে হবে, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আবার ভিন্ন দিকে মোড় নিয়ে এ যুদ্ধের আরো বিস্তৃতি ঘটতে পারে। অর্থাৎ পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারের পণ্যের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কাই বেশি। অন্য দিকে আমরা একটি আমদানিনির্ভর দেশ। জ্বালানি, খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য আমরা বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় আসন্ন ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারকে এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আপাতত খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা ও মানুষকে এর উচ্চমূল্যের যাতনা থেকে রক্ষার জন্য বাজারের ওপর কার্যকর পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement