২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পাট খাতের উন্নয়নে করণীয়

বিশেষায়িত মিল গড়তে হবে

-

আমাদের কাঁচামাল আছে। বিশ্বে বিপুল বাজার আছে। তার পরও নিজেদের কাঁচামাল দিয়ে বিশ্ববাজারের উপযোগী করে পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করতে পারছি না। এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কী হতে পারে? কথাটা বলছি পাট খাত প্রসঙ্গে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৈরী পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক দেশ। পাটের ক্ষেত্রেও দ্বিতীয় নয়, বিশ্বের শীর্ষস্থান দখল করা সম্ভব। সেটি হলে পাট খাতের আয় গার্মেন্ট খাতের আয়ের চেয়ে বেশি হতে পারে। এ জন্য শুধু একটি জিনিস দরকার; সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
পাট আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ। দীর্ঘকাল ধরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাটই রেখেছে মুখ্য ভূমিকা। কিন্তু বিদেশী চক্রান্ত ও নিজেদের দুর্বলতায় আমরা সেই অবস্থান হারিয়েছি। এখনো বিশ্বে পাটপণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে পরিবেশ বিপর্যয়ের এ সময়ে বিশ্বজুড়ে যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে সেটিই পাটপণ্যের জন্য ইতিবাচক সুযোগ। পাটপণ্য সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। পলিথিন ও প্লাস্টিকের পরিবর্তে এখন বিশ্বে পাটের সামগ্রী ব্যবহারের একটি ক্রেজ চলছে। বাজারের থলে থেকে শুরু করে বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়িশিল্পে পাটপণ্যের ব্যবহার হচ্ছে। গাড়ির সিটের কুশন হিসেবে পাটবস্ত্র ব্যবহার করছে অভিজাত গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্ববাসীর এ ক্রেজ কাজে লাগানো সম্ভব সহজেই। দরকার শুধু দু’টি কাজ করা। প্রথমত, কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহী করে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া এবং দ্বিতীয়ত, বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী পাটপণ্য উৎপাদনের উপযোগী বিশেষায়িত পাটকল প্রতিষ্ঠা করা।
পাট উৎপাদনে এখনো বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েনি; কিন্তু যে অবস্থানে থাকা সম্ভব সেটি নেই। এমনকি পাটবীজ পর্যন্ত ভারত থেকে আমদানি করে কৃষককে দিতে হয়। আমদানি করা পাটবীজ প্রায়ই নিম্নমানের হয় বলে অভিযোগ আছে। এত বছর পরে এসে কৃষিমন্ত্রী বলছেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। এ ঘোষণা বাস্তবে কতটা কার্যকর হয় সেটি দেখতে অপেক্ষার বিকল্প নেই। আমদানিনির্ভরতা বহু বছর ধরে চলে আসছে। বর্তমান সরকারও এক যুগ ধরে ক্ষমতায়; কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে এত সময় লাগার কারণ কী?
গত রোববার জাতীয় পাট দিবস পালন করা হয়েছে ঘটা করে। নানা রকমের কথাবার্তা শোনা গেছে কৃষি ও পাটমন্ত্রীর জবানে। কিন্তু খাতটিকে বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে আনতে কী কী করা হচ্ছে তেমন কিছু শোনা যায়নি। বিগত ৫০ বছরে পাটশিল্পের কোনো উন্নয়ন হয়নি। পাটকলের সংখ্যা বাড়লেও কেবল কাঁচা পাট, সুতা ও বস্তার ব্যবসাই করা হচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকটি পাটকল বহুমুখী পণ্য ও উপকরণ তৈরি করছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদার তুলনায় তা খুবই সামান্য।
দেশে এখনো প্রায় ২০০টি পাটকল নিয়মিত উৎপাদনে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিল্পপতি ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, পাট খাতের বিদ্যমান সম্ভাবনার সুযোগ নিতে হলে বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনে যেতে হবে। এ জন্য দরকার বিশেষায়িত পাটকল। তেমন বিশেষায়িত পাটকল খুব কমই আছে আমাদের। খেলাপি হবে জেনেও প্রভাবশালীদের ব্যাংকঋণ দেয়া বন্ধ করে যেসব পাটকল মালিক সত্যিই আন্তর্জাতিক মানের বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের উপযোগী করে মিলের দক্ষতা বাড়াতে চান তাদের ঋণ দেয়া যেতে পারে। এ রকম গোটা পঞ্চাশেক বিশেষায়িত মিল তৈরি করা গেলেই বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে যেতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
স্বাধীনতার পর পাট খাত জাতীয়করণের মাধ্যমে শিল্পটি ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল এ সত্য অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। এখন সে ক্ষতি বর্তমান সরকারের হাত ধরে কাটিয়ে ওঠা গেলে তা দেশ ও জাতির মঙ্গল বয়ে আনবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আছে। বাইরের চাপ থাকবে, চক্রান্তও থাকবে। সেসব উপেক্ষা করে এগোতে পারলে পাট খাতে বাংলাদেশ শীর্ষে পৌঁছাবে তাতে সন্দেহ নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ডেসটিনির রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনের মামলার রায় ১৫ জানুয়ারি আবারো হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের ইসকন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে সরকার : হাইকোর্টকে রাষ্ট্রপক্ষ উজিরপুরে রিকশা ও ইজিবাইকের ব্যাটারি চুরির হিড়িক ৯ দফা দাবিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমাবেশের ডাক চট্টগ্রাম আদালতে দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতি চলছে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন বরখাস্ত ম্যাজিস্ট্রেট উর্মি শ্রীলঙ্কায় আকস্মিক বন্যায় পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অপ্রীতিকর ঘটনায় প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ, ন্যায়বিচারের আশ্বাস তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রির ঘরে

সকল