২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দুর্নীতি

সম্পদ বিবরণী দাখিলে অনীহা

-

দেশে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বড় একটি অংশ নিজেদের মালিক মোক্তার মনে করে। সরকারি চাকরির যেই পদেই নিয়োগ পায় তা অনেকটা পৈতৃক সম্পত্তির মতো ব্যবহার করে। অনিয়ম-দুর্নীতি করে বিপুল অর্থবিত্ত অর্জন করে। একেবারে নিচের স্তরের সরকারি কর্মচারীরাও শত কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। এমন উদাহরণ হলো স্বাস্থ্য বিভাগের গাড়িচালক আবদুল মালেক। তার শত কোটি টাকার সম্পত্তির হদিস পাওয়া যায়। সরকারের উপরের দিকের চাকরিজীবীদের রেকর্ড আরো খারাপ। সরকারি কিছু বিভাগ রয়েছে, যেখানে গড়ে বেশির ভাগই অবৈধভাবে অর্থ কামাই করে। আইন অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের বিবরণী দাখিল করার দায় রয়েছে। সেটি পালন করলে আজ সরকারের বিভিন্ন বিভাগে দুর্নীতি মহামারী আকারে দেখা দিতে পারত না।
বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর সরকারি চাকুরেদের মূল বেতন ৯১ থেকে শতভাগ বাড়িয়েছে। এর পাঁচ বছর পর হিসাব করে দেখা গেল দেশে সংঘটিত দুর্নীতির বেশির ভাগ করছে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক দুর্নীতির দায়ে যত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে এর অর্ধেকই প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত। দুর্নীতি মামলায় ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুদক গ্রেফতার করে ৭৯৯ জনকে। তাদের মধ্যে ৩৯০ জনই সরকারি চাকরিজীবী। বিগত বছরগুলোতে বিপুল অর্থ পাচার হওয়ার খবর প্রকাশ হয়ে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য-উপাত্ত দেয়া হচ্ছে না। অন্য দিকে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী পাড়া গড়ে উঠছে। সেখানে নিরাপদ আবাস বানাচ্ছে সরকারি আমলারা। অবসর নেয়ার পর স্বজনদের নিয়ে সেখানে আয়েশি জীবনযাপন করবে।
দেখা যাচ্ছে, তারা শুধু দুর্নীতিই করছে না এ খবর যাতে কোনোভাবে ফাঁস হয়ে না যায় তারও ব্যবস্থা করছে।
‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯’ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের প্রতি পাঁচ বছর পর ডিসেম্বরে সম্পদের বিবরণী জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। বিগত ৪৩ বছর ধরে এ বিধান মানা হয়নি। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে জানা যায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত বছরের জুনে এ বিধিমালা মেনে সম্পদের বিবরণী দিতে চিঠি দেয়। এরপরও সরকারি চাকুরেদের প্রায় সবাই বিধিমালা মেনে সম্পদ বিবরণী জমা দেয়নি। পত্রিকাটি ১২টি মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়েছে। এতে জানতে পেরেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবসহ মোট মিলে মাত্র এক ডজন চাকুরে সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছে। এখন সরকারের বেশ কয়েক ডজন সচিব রয়েছে। অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব রয়েছে আরো বহু বেশি। বড়রাই যখন নিয়ম মানছে না ছোটরা কেন সেটি মানবে।
ওই বিধি মোতাবেক সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় নিজের ও পরিবারের সব সম্পত্তির হিসাব পেশ করার কথা। শেয়ার, সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বীমা পলিসি ও ৫০ হাজার টাকার বেশি মূল্যের অলঙ্কারসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণী দাখিল করতে হবে। পাশাপাশি প্রতি পাঁচ বছর পর সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণী দাখিল করলে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করা দুরূহ হওয়ার কথা।
দেশে নিয়মকানুন, বিধিবিধানের অভাব নেই। দেশের নীতিনির্ধারকরা এসব প্রণয়নে দক্ষতার পরিচয় দিলেও সেগুলো পরিপালনে উদাসীন। অন্যভাবে বললে বলতে হয়, একটি ব্যবস্থা যদি পুরোটা অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিপতিত হয় তাহলে জবাবদিহি কে করবে? প্রশাসনের শীর্ষপর্যায়ে বিকৃতি দেখা দিলে নিচের দিকে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। লক্ষণীয়, এক যুগ ধরে দেশ যেন দুর্নীতি-অনিয়মের প্লাবনে ভাসেছে। কে কাকে জবাবদিহি করবে। তারই প্রভাব পড়েছে সরকারি চাকুরেদের ওপর। বিধিটি কার্যকর করা কঠিন নয়। প্রয়োজন শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব যারা দেশ পরিচালনা করছে তাদের জাতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া। তাহলে চাকরিবিধি অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীরা নিজেদের সম্পদের সঠিক বিবরণী দিতে বাধ্য হতো। তখন সরকারি কাজে দুর্নীতি অনেক কমে আসত।


আরো সংবাদ



premium cement
ডেসটিনির রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনের মামলার রায় ১৫ জানুয়ারি আবারো হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের ইসকন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে সরকার : হাইকোর্টকে রাষ্ট্রপক্ষ উজিরপুরে রিকশা ও ইজিবাইকের ব্যাটারি চুরির হিড়িক ৯ দফা দাবিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমাবেশের ডাক চট্টগ্রাম আদালতে দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতি চলছে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন বরখাস্ত ম্যাজিস্ট্রেট উর্মি শ্রীলঙ্কায় আকস্মিক বন্যায় পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অপ্রীতিকর ঘটনায় প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ, ন্যায়বিচারের আশ্বাস তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রির ঘরে

সকল