২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দেশে ২০৩০ সালে খাদ্যঘাটতির শঙ্কা

কৃষির আধুনিকায়নই সমাধান

-

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারি বয়ান, ‘দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে’। এ কথা ঠিক, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অভূতপূর্ব; বলা যায় চোখ ধাঁধানো। উল্লেখ করার মতো অনেক প্রকল্প শেষ হয়েছে। কিছু মেগা প্রজেক্ট চলমান। কিন্তু এ উন্নয়নই যে সব নাগরিকের জীবনমান মানসম্পন্ন করতে যথেষ্ট নয়; ধনী-গরিবের মধ্যে আয়বৈষম্য দিন দিন আকাশছোঁয়া হওয়ায় তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তাই দেশের প্রকৃত অগ্রগতির জন্য আরো অনেক মানদণ্ড দরকার বৈকি। একটি দেশের সামগ্রিক অগ্রগতিতে গুচ্ছ সূচকের উন্নয়ন সমানতালে হওয়াই কাম্য। তা না হলে উন্নয়নে ভারসাম্য থাকে না।
টেকসই উন্নয়নে আগে যেকোনো দেশে সবার জন্য সুষম খাবার নিশ্চিত করতে হয়। এ জন্য শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেই চলবে না; চাই যথাযথ পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য। কিন্তু পূর্বাভাস বলছে, যে ধারাবাহিকতায় দেশে এখন খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে তাতে আগামী ২০৩০ সালে খাদ্যঘাটতিতে পতিত হতে পারি আমরা। কারণ হিসেবে কৃষি অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দেশের জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, আবাদি জমির পরিমাণ এর চেয়ে বেশি হারে কমছে। আবার ভূমির উর্বরতাও হ্রাস পাচ্ছে। ফলে উৎপাদন বা ফলনও কমে যাচ্ছে।
নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের যে গতি বর্তমানে রয়েছে তাতে আগামী ২০৩০ সালে আলু ছাড়া প্রায় সব ধরনের খাদ্যশস্যের ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ৪১৩ দশমিক ২৫ লাখ টন। আগামী ২০৩০ সালে এ চাহিদা হবে ৪৭৬ দশমিক পাঁচ লাখ টন। অন্য দিকে দেশের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশু খাটোজনিত সমস্যায় ভুগছে। কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমন বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদিত খাদ্যশস্যের পুষ্টিমানও কমছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দেশের শ্রমশক্তির প্রায় ৪৩ শতাংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি ধরে ২০৩০ সালে জনসংখ্যা হবে ১৮ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার। মন্ত্রণালয় বলছে, ২০৩০ সালে আমাদের দানাদার খাদ্যশস্য প্রয়োজন ৪৭৬ দশমিক পাঁচ লাখ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছর দেশে ৪১২ দশমিক ২৫ লাখ টন দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ৪৫৫ দশমিক ০৫৩ লাখ টন দানাদার শস্য উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে চাল ৩৮৬.০৮ লাখ টন, গম ১২.৩৪৪ লাখ টন এবং ৫৬.৬৩১ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদিত হয়েছে। এ ধারা বজায় থাকলে ২০৩০ সালে খাদ্যশস্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
দেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাদের খাদ্যচাহিদা পূরণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা। অন্যথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম টিকে থাকা কঠিন হবে। এখনো আমাদের দেশের মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন তিন থেকে পাঁচ গুণ বাড়লেও অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। দেশের অর্ধেক গর্ভবতী নারী রক্তশূন্যতায় ভোগেন। বিশ্বে খাদ্যশক্তি গ্রহণের গড় দুই হাজার ৯৪০ কিলো ক্যালরি। আর আমাদের দেশে এ হার দুই হাজার ৫১৪ কিলো ক্যালরি। বাংলাদেশে খাদ্যতালিকায় শতকরা ৭০ ভাগ ক্যালরি আসে দানাদার খাবার থেকে। বিশেষ করে ধান থেকে।
দেশ আগামীতে যাতে খাদ্যশস্যের সঙ্কটে না পড়ে তার জন্য প্রয়োজন শস্য বিন্যাস পরিবর্তন ও আধুনিক কৃষি সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। এখনো কৃষিই বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি। খাদ্যশস্য ঘাটতি পূরণে দেশে ফসল উৎপাদনের ধারাতে পরিবর্তন আনতে হবে। চাহিদা প্রতি বছর বাড়তে থাকায় উৎপাদনের ধারা বজায় রাখতে দেশের হাওর, চর এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাসের পাহাড়ি এলাকায় উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি বিস্তারের মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা অর্জনের উদ্যোগ নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ডেসটিনির রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনের মামলার রায় ১৫ জানুয়ারি আবারো হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের ইসকন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে সরকার : হাইকোর্টকে রাষ্ট্রপক্ষ উজিরপুরে রিকশা ও ইজিবাইকের ব্যাটারি চুরির হিড়িক ৯ দফা দাবিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমাবেশের ডাক চট্টগ্রাম আদালতে দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতি চলছে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন বরখাস্ত ম্যাজিস্ট্রেট উর্মি শ্রীলঙ্কায় আকস্মিক বন্যায় পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অপ্রীতিকর ঘটনায় প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ, ন্যায়বিচারের আশ্বাস তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রির ঘরে

সকল