ইউক্রেনের বন্দরে বাংলাদেশীর প্রাণহানি
- যুদ্ধের প্রভাব মোকাবেলায় প্রস্তুতি দরকার
- ০৪ মার্চ ২০২২, ০০:০০
বিশ্বায়ন বড় ধরনের সুযোগ যেভাবে এনেছে, এর বড় ক্ষতিকর দিকও আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। করোনা মহামারীর সময় বিষয়টি গুরুতরভাবে টের পেল বিশ্ববাসী। চীনের উহানে সৃষ্টি হওয়া করোনা অল্প কিছুদিনের মধ্যে কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। পুরো পৃথিবীতে এটি ছড়িয়ে পড়তে বেশি দিন লাগেনি। শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো অঞ্চলই এ মহামারী থেকে রেহাই পায়নি। অথচ এর আগে পৃথিবীতে এমন বহু মহামারী হয়েছে, সেগুলো তার উৎপত্তিস্থলে সীমিত থেকেছে। একইভাবে যুদ্ধ-বিগ্রহসহ যেকোনো ধরনের প্রকৃতি কিংবা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের প্রভাবও আর নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ থাকছে না। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের প্রভাব দ্রুত বৈশ্বিক রূপ নিচ্ছে। শুধু পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কিংবা নিরপেক্ষতা বজায় রেখে এমন অবস্থার নেতিবাচক অভিঘাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। এ জন্য মূলত সচেতনতা বিচক্ষণতা ও সময়মতো প্রস্তুতি গ্রহণ প্রয়োজনীয়।
যুদ্ধের মধ্যে পড়ে আমাদের এক মেরিন প্রকৌশলীর প্রাণ গেছে। গত বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে নোঙরে থাকা ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটিতে গোলা পড়ে বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়। প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান জাহাজের বাইরে এসে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। তিনি সেখানে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। জাহাজটিও আগুন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের একটি জাহাজ। এটি ইউক্রেন থেকে পণ্য নিয়ে ইতালি যাওয়ার কথা। ইউক্রেনে হামলা শুরুর আগের দিন অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছায় জাহাজটি। অথচ ইউক্রেনে রুশ হামলার আশঙ্কার বিষয়টি বেশ কিছু দিন ধরে আলোচনায় ছিল। পুতিন সেখানে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাবেন, এটা মোটামুটি ওয়াকিবহাল মহলের জানা ছিল।
শিপিং করপোরেশন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সরকারি সংস্থা। জাহাজটি একটি যুদ্ধ আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশের ব্যাপারে সরকারের কাছে তথ্য থাকার কথা। সেই হিসাবে পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে জাহাজটির গতিপথ পরিবর্তন করা যেত। ২৪ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছার পরও সেটিকে অন্য কোথাও নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া যেত। জাহাজটিতে আরো ২৮ জন নাবিক থাকার কথা জানা যায়। গোলার আঘাতে পুরো জাহাজটি আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আরো বেশি বাংলাদেশীর প্রাণহানি ঘটতে পারত।
ইউক্রেন আগ্রাসন নিয়ে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছে। জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি এ ব্যাপারে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের নেতৃত্বে সংলাপের মাধ্যমে সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রস্তাবে জোরালো সমর্থন দিয়েছেন। জাতিসঙ্ঘ সনদে বর্ণিত সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় অখণ্ডতা নীতির প্রতি তিনি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আমেরিকা ও ইউরোপের সাথে বাংলাদেশের জোরালো সম্পর্ক আগে থেকে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার সাথেও গভীর রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। রূপপুর পরমাণু প্রকল্প, স্যাটেলাইট নির্মাণ চুক্তি ও দেশটির রাষ্ট্রীয় তেল গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের সাথেও বাংলাদেশের বড় ধরনের স্বার্থ জড়িত। সরকারকে তাই সব দিক খেয়াল রেখে সামনে এগোতে হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধির সতর্ক বক্তব্যে তা প্রতিফলিত হয়েছে।
এই যুদ্ধের অনিবার্য বাস্তবতা হচ্ছে, এর বহুমাত্রিক প্রভাব আমাদের ওপর এসে পড়বে। সেগুলো মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও উদ্যোগ গ্রহণের কাজ সময়মতো করতে হবে। যেমন- শিপিং করপোরেশনের জাহাজটিকে সময়মতো রুট পরিবর্তন করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া ছিল এমন একটি কাজ। তা আমাদের সরকারি কর্তৃপক্ষ সময়মতো করতে পারেনি। এই যুদ্ধ সামনে আরো বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে হাজির হবে। যেমন- রাশিয়ায় আমাদের পোশাক রফতানির এক বিলিয়ন ডলারের বাজার ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ভেতরে চলমান তাদের বৃহৎ প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। বৈশ্বিক জ্বালানির দাম ইতোমধ্যে বেড়েছে। সবচেয়ে বড় আঘাত আসতে পারে খাদ্য সরবরাহ নিয়ে। এ ধরনের গুরুতর প্রয়োজনীয় ইস্যুগুলোতে আমাদের নীতিনির্ধারকদের আগে থেকে কৌশল গ্রহণ করতে হবে। আমরা আশা করব, সময়মতো উদ্যোগ ও প্রস্তুতি নিলে সঙ্কট মোকাবেলায় সেটা কাজে আসতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা