এ প্রবণতা আত্মঘাতী
- ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০, আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২৩:৫০
সরকারি তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা নিয়ে সংশয় নতুন নয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আপত্তি উত্থাপন করে আসছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সরকারি তথ্য-উপাত্ত ও বাজেটের হিসাবে অস্বচ্ছতার অভিযোগ করেছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। প্রকাশ্য সেমিনারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির প্রধানদের উপস্থিতিতে সংস্থাটি এমন অভিযোগ এনেছে।
বলা হয়েছে, সরকারি তথ্য-উপাত্ত ও বাজেটের হিসাবের স্বচ্ছতায় যেমন ঘাটতি আছে, তেমনি আর্থিক খাতের তথ্য-উপাত্ত সরবরাহেও বড় ধরনের ঘাটতি আছে। আবার সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত তথ্যে গরমিলের প্রসঙ্গও উঠে আসে। যেমনÑ রাজস্ব আয়ের পরিসংখ্যান নিয়ে অর্থ বিভাগ ও এনবিআরের তথ্যে গরমিল রয়েছে। ব্যাংক ঋণের তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যেও ভিন্নতা দেখা যায়। সরকারের কর্মকাণ্ডের অনেক তথ্য চাইলেও পাওয়া যায় না। সিপিডি বলছে, অডিট রিপোর্ট ঠিকমতো প্রকাশ হয় না। বাজেটে আর্থিক বরাদ্দের পরিমাণ জানা গেলেও প্রকৃত খরচ কত জানা যায় না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে কত টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় তা জানা যায় না।
অভিযোগগুলো একটি গণতান্ত্রিক মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য গুরুতর। এতে স্পষ্ট হয় যায়, জাতির অগ্রগতি ও উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আর্থিক খাত সেটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে না। গত বছর খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় যখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে ভিন্নমত তুলে ধরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ সম্পর্কিত তথ্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আইএমএফ। সংস্থাটির মতে, রিজার্ভের পরিমাণ ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। আর খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য গোপন করা হয়েছে।
সরকারের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু গত বছরখানেক ধরে সেটি স্পষ্ট করে বলতে শুরু করেছে দেশী-বিদেশী সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা।
কোনো দেশের সরকারি তথ্যে এমন অসঙ্গতি অবিশ্বাস্য। আমাদের দেশেও এর আগে অন্য কোনো সরকারের আমলে অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান নিয়ে এমন ধোঁয়াশা কখনো তৈরি হয়নি। যদিও সব সরকারেরই একটি প্রবণতা থাকে নিজেদের সময়ে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরা। তবে তা করা হয় রাজনীতির মঞ্চে বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্য দিয়ে। পরিসংখ্যানের দিকে মনোযোগ দিলে যে কেউ প্রকৃত চিত্রটা উদঘাটন করতে পারতেন; কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়ে রাজনীতির মঞ্চে বক্তব্য-বিবৃতির পাশাপাশি পরিসংখ্যানের বস্তুনিষ্ঠতাতেও হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, যা অনভিপ্রেত ও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হবে।
তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি হলে বা অযথার্থ হলে সরকারের নীতি প্রণয়নে অসুবিধা হয়। দেশে কত মানুষ প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র সেই পরিসংখ্যান যদি ঠিক না হয় তাহলে দারিদ্র্যবিমোচনে যেকোনো কর্মসূচিতে ত্রুটি থেকে যাবে। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ভ্রান্ত নীতির ভিত্তিতে প্রণীত কর্মসূচি অনুসরণ করে কার্যত কোনো লক্ষ্যই অর্জন করা সম্ভব নয়। এটি শুধু জাতীয় জীবনকেই প্রভাবিত করবে না, আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাথে লেনদেনও অস্বচ্ছ ও ঝুঁকিপূর্ণ হতে বাধ্য। দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো তখন সরকারি উপাত্তের ওপর আস্থা হারাবে।
সিপিডির সেমিনারে বক্তারা জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের তথ্য সরবরাহ নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব দেন। সিপিডি নিজে আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তথ্য-উপাত্ত উন্মুক্ত করার সুপারিশ করে। এর আগে সিপিডি মন্তব্য করেছিল, সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হিসাবকে রাজনৈতিক সংখ্যায় পরিণত করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারের দেয়া জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন নিয়ে ওই মন্তব্য করে সংস্থাটি।
দেশ ও জাতির বড় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আগেই এ আত্মঘাতী প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা