আরেকটি বিপর্যয় ডেকে আনা হলো
- ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
ইউরোপীয়রা নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারল না। শক্তিশালী সামরিক জোট ন্যাটো ইউক্রেনের নিরাপত্তায় কোনো কাজে এলো না। দেশটির সার্বভৌমত্ব নস্যাতে মূলত এ জোটের উপস্থিতি অনেকটাই দায়ী। এর সদস্য হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত না করলে ইউক্রেনীয়দের হয়তো এভাবে চড়া মূল্য দিতে হতো না। ইউরোপের পূর্ব সীমান্তে সামরিক এ গোলোযোগ সর্বোন্নত মহাদেশটির বাকি অংশে মোটাদাগে প্রভাব ফেলবে। সামরিক হামলা ও প্রতিহামলার ঘটনা না ঘটলেও এ অঞ্চলের অধিবাসীদের এ যাবৎকালে মসৃণ উন্নত জীবনযাপন হুমকিতে পড়বে। অচিরেই বাকি বিশ্বের অর্থনীতিতেও এর উত্তাপ লাগবে। আর ছোট দেশগুলোর নিরাপত্তা ভাবনায় নতুন শঙ্কা দেখা দেবে। সবাই বড় প্রতিবেশী থেকে স্বাধীনতা রক্ষায় সামরিকায়নের প্রকল্প হাতে নেবে। নিঃসন্দেহে এতে সারা বিশ্বে নতুন করে অস্ত্র ও সামরিক প্রতিযোগিতা নতুনভাবে গতি পাবে।
বলদর্পী দেশ ও শাসকরা বরাবরই যুদ্ধের পক্ষে নির্লজ্জভাবে সাফাই গায়। তেমনটিই দেখা গেল যুদ্ধের ঘোষণা দেয়ার সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের বেলাতেও। তার ভাষায় ইউক্রেনের রুশভাষীসহ সাধারণ নাগরিকদের গণহত্যা থেকে বাঁচাতে একটি বিশেষ সামরিক অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কয়েক দশক ধরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব দেশে দেশে সামরিক অভিযান চালানোর সময় এ ধরনের বয়ান দিত। এ ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘকে রাবার স্ট্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তখন ‘রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ সংক্ষেপে আরটুপি নীতির প্রয়োগ করা হতো। রাশিয়াও একই নীতি জোরালোভাবে প্রয়োগ করছে। মস্কোর যুক্তি- যুক্তরাষ্ট্র এ নীতি প্রয়োগ করেছে যুদ্ধ শুরুর জন্য। একই নীতির প্রয়োগ করে রাশিয়া ‘গণহত্যা’ থামাতে চায়।
‘গণহত্যা থামানোর’ রুশ অভিযানে পুরো ইউক্রেন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণে কেঁপে ওঠে। শহর থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে মানুষ। ইতোমধ্যে অনেক বড় বড় স্থাপনা রুশ হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। সামরিক এই অভিযানে বহু বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। শরণার্থীদের জায়গা দিতে প্রতিবেশীদের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এতদিন মধ্যপ্রাচ্যে ইউরোপের সামরিক হামলায় সব হারানো মানুষকে জায়গা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে পশ্চিমারা।
ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপে জ্বালানি ও উৎপাদন ব্যবস্থা বড় ধরনের ধাক্কা খাবে। এ মহাদেশে অন্যতম প্রধান জ্বালানি সরবরাহকারী রাশিয়া। অন্য দিকে, পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পথ খুঁজছে। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে নিজেদের দেশে রাশিয়ার ব্যাংক ও দেশটির জমা থাকা অর্থ জব্দ করেছে। করোনার পর বিশ্ব নিঃসন্দেহে মনুষ্যসৃষ্ট আরেকটি বিপদে নিপতিত হতে যাচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি পড়বে। আর বাংলাদেশে এর বহুমাত্রিক প্রভাব পড়বে। সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। রূপপুরে রাশিয়ার উদ্যোগে চলা পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘ অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। অঞ্চলটি বৃহৎ গম উৎপাদনকারী। এ কারণে খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
ইউক্রেনে চলমান রুশ আগ্রাসনকে কোনোভাবে ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ায় চালানো হামলা থেকে আলাদা কিছু মনে করার অবকাশ নেই। এখন পর্যন্ত যতটুকু খবর জানা যাচ্ছে, ইউক্রেনের রুশ ভাষাভাষীদের নিয়ে রাশিয়া নিজের অনুকূলে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় কিয়েভে। যে সরকার মস্কোর আজ্ঞাবহ হবে। মুসলিম দেশগুলোতে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমারা যা এত দিন করেছে তারই রুশ সংস্করণের শিকার এখন কিয়েভ। এগুলোর কোনোটির ফল ভালো হয়নি। ওই যুদ্ধগুলোর দীর্ঘমেয়াদি ফল যদি এখন তলিয়ে দেখা হয়; তাহলে দেখা যাবে এ দিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব লাভবান হয়নি। আমেরিকা নিজে ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে। অন্য দিকে আক্রান্ত দেশগুলো পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। ইউক্রেন আগ্রাসনে পুতিন ও রাশিয়ার জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে এমন ভাবার কারণ নেই। আফগানিস্তানে হামলার জেরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ে। ইউক্রেন হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া নতুন করে আবার বিপর্যয়ে পড়ে কি না তা-ই এখন দেখার বিষয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা