২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য করণীয়

নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে হবে

-

দেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে গ্যাস উৎপাদনে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। গত ২৫ বছরে গ্যাস উৎপাদনের ৬৩ শতাংশ এখন চলে গেছে বিদেশী কোম্পানিগুলোর কাছে। অথচ ১৯৯৮ সালের আগ পর্যন্ত শতভাগ উৎপাদন করত দেশীয় কোম্পানি। বর্তমানে বর্ধিত চাহিদা মেটাতে গ্যাস উৎপাদনে বিদেশী কোম্পানিগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে উচ্চমূল্যের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চার গুণেরও বেশি দামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে হচ্ছে। এক বছর আগেও প্রতি এমএমবিটিইউয়ের (পার মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) দাম ছিল সাত ডলারের কাছাকাছি। সেই গ্যাসই কিনতে এখন ব্যয় করতে হবে ২৯ ডলারের বেশি। প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্কট বিবেচনায় ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার বিদেশ থেকে চড়া দামে তরলীকৃত গ্যাস কিনে অত্যন্ত কম দামে স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের সরবরাহ করায় প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের অর্থ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ভর্তুকির টাকা আবার করদাতা জনগণের কাছে থেকে আদায় করা হচ্ছে। যেমন- ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার বিদেশ থেকে প্রতি কিউবিক মিটার এলএনজি ৩১ টাকা ৫৬ পয়সায় আমদানি করে স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চার টাকা ৪৫ পয়সায় বিক্রি করেছে। এতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয় প্রতি কিউবিক মিটারে ২৭ টাকা আট পয়সা।
দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে দেশীয় কোম্পানিগুলোর যে হারে সক্ষমতা বাড়ানোর কথা ছিল তা করা হচ্ছে না। নতুন নতুন কূপ খননে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে না। বলা যায়, অর্থসঙ্কটে দেশীয় কোম্পানিগুলো গ্যাস উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়াতে পারছে না। অথচ দেশীয় কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছিল। ওই তহবিলে কয়েক হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে আছে।
পেট্রোবাংলার এক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৯৮ সালের আগ পর্যন্ত চাহিদার পুরো গ্যাস উৎপাদন করত জাতীয় তিনটি কোম্পানি। কিন্তু ১৯৯৮ সালে কেয়ার্ন এনার্জির মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহে বিদেশী কোম্পানির কার্যক্রম শুরু হয়। ওই বছর সমুদ্রবক্ষে আবিষ্কৃত সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন শুরু করে কোম্পানিটি। ২০০৪ সালে গ্যাস উৎপাদনে ৭৬ শতাংশ অবদান ছিল দেশীয় কোম্পানিগুলোর। তখন ২৪ শতাংশ গ্যাস উৎপাদন করত বিদেশী কোম্পানি। আরো দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশে তিনটি বিদেশী কোম্পানি গ্যাস উত্তোলন করত। ওই অর্থবছরে উৎপাদিত গ্যাসের ৫২ শতাংশ উৎপাদন করে তিনটি বিদেশী কোম্পানি। কিন্তু অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করায় ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ওই বছর থেকে দু’টি বিদেশী কোম্পানি গ্যাস উত্তোলন করছে। দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাড়তি চাহিদা মেটাতে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদন করতে বলা হচ্ছে। যেখানে উৎপাদনক্ষমতার ৫০-৬০ শতাংশ উৎপাদনের কথা, সেখানে কোনো কোনো গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে প্রায় শতভাগ। এতে এক দিকে বিদেশী কোম্পানিগুলো স্বল্পসময়ে বাড়তি উৎপাদন করে অতিরিক্ত অর্থ তুলে নিচ্ছে, অন্য দিকে গ্যাসের মজুদও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গ্যাসের মজুদ কমে আসায় আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে।
বিশ্বে যুদ্ধ-বিগ্রহে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়। যেমন এ মুহূর্তে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বেধে যাওয়ায় জ্বালানির দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে গ্যাসের। সঙ্গত কারণে দেশের অর্থনৈতিক ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়াতে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান যেমন অব্যাহত রাখতে হবে, তেমনি গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় জ্বালানি সঙ্কট দিন দিন আরো বাড়বে। এতে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কুয়েটের ১২ শিক্ষক-কর্মচারী বরখাস্ত চট্টগ্রামের আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে রাঙ্গামাটিতে মানববন্ধন সূচকের উত্থানে ডিএসইতে লেনদেন চলছে আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি ড. ফরহাদের চৌগাছায় অস্ত্র ও গুলিসহ আটক ১ ইসকনের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান মির্জা ফখরুলের সাইফুল হত্যাকাণ্ডে ইসকনের শোক, দায় নেবে না বহিষ্কৃত চিন্ময়ের কর্মকাণ্ডের র‍্যাবের সাবেক ২ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ গাংনীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আলগামনচালক নিহত বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন মমতা ব্যানার্জি, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ‘যুদ্ধবিরতি ইসরাইলের জন্য কৌশলগত পরাজয়’

সকল