২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ইউক্রেনে রুশ হস্তক্ষেপ

এর পেছনে পাশ্চাত্যের দায় আছে

-

ইউক্রেনের দু’টি অঞ্চলকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এ নিয়ে বিশ্ব এখন উত্তপ্ত। রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালাতে পারে এমন ধারণা থেকে এমনিতেই পরিস্থিতি গরম করে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো। পুতিন সে পথে যাননি। তিনি সামরিক হামলার একটি হুমকি সৃষ্টি করে সম্পূর্ণ অসামরিক চাল দিয়েছেন। ‘দোনেৎস্ক’ ও ‘লুহানস্ক’ নামে যে দু’টি অঞ্চলকে স্বাধীন ঘোষণা করেছেন সেখানে রুশ জনগোষ্ঠীর মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা ইউক্রেন থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য লড়াই করছিলেন। জীবন দিয়েছেন অনেক মানুষ। এর পেছনে রাশিয়ার মদদ ছিল তাতে সন্দেহ নেই।
পুতিনের এই কৌশল আন্তর্জাতিক আইন বা জাতিসঙ্ঘের সনদের সাথে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ বা পরিপন্থী সে আলোচনা নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলোÑ আন্তর্জাতিক আইন কেবল রাশিয়ার একার জন্য প্রযোজ্য নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যেখানে নানা অজুহাতে একের পর এক স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোতে সামরিক হামলা চালিয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিচ্ছে, লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করছে, প্রতিটি জাতির সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে, সরকার পাল্টে দিচ্ছে বা গণতন্ত্রের বুলি মুখে নিয়ে গণবিরোধী সরকারগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে, সেখানে রাশিয়ার পদক্ষেপের নিন্দা করার সুযোগ কোথায়? যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের পদক্ষেপগুলো বিশ্বকে দেখিয়েছে, জাতিসঙ্ঘ সনদ বলি আর আন্তর্জাতিক আইন বলি সবই শক্তিমানের হাতিয়ার মাত্র। যার ক্ষমতা আছে সে আইনের তোয়াক্কা করে না। ইউক্রেনে পুতিন সেটিই করেছেন। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি ক্রাইমিয়া দখল করে নিয়েছেন। তাতে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে? রাশিয়াকে তেমন কোনো গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হয়নি।
এবারের ঘটনায় কী হতে পারে? পুতিনকে সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে। সেটি হয়েছে। কিছু নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে হবে। সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু সেটি সীমিত আকারের হবে তাতে সন্দেহ নেই। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে যেভাবে সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তেমন কিছুই রাশিয়ার ক্ষেত্রে ঘটবে না এটা নিশ্চিত। আর সীমিত আকারের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে কাবু করা যাবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
বিশ্বনেতারা রাশিয়ার সমালোচনা করছেন বটে; কিন্তু পুতিনেরও সমর্থক আছে বিশ্বে। চীন নিন্দা করেনি। নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগা বলেছেন, ‘পুতিন ঠিক কাজটিই করেছেন। যদি গণভোটের আয়োজন করা হয়, তাহলে মানুষ ওই অঞ্চলগুলোকে (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) রাশিয়ার সাথে যুক্ত করার পক্ষে ভোট দেবেন।’
চীনের নিন্দা না করার গূঢ় কারণ আছে। তাকে সম্ভবত একইভাবে নিজের সীমান্তসংলগ্ন অনেক সমস্যার সমাধান করতে হতে পারে। আর সেটি করতে হবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সম্মিলিত চাপ উপেক্ষা করেই।
পুতিন এই কাজটি করলেন এমন সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের উত্থান প্রতিহত করার সর্বাত্মক কৌশল নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর সম্প্রতি পুতিন বেইজিং সফর করেছেন। পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে মস্কো ও বেইজিং। দেশ দু’টি যেসব কাজ করছে সেগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কর্মকাণ্ডের ফলাফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। পুতিনের সর্বশেষ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে একটি অন্ধকার যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে বলে কেউ কেউ উল্লেøখ করেছেন। কিন্তু সেই অন্ধকার যুগ আগে থেকেই আছে। আইন-কানুন ও ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতিই অন্ধকারের আলামত। সেই আলামত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে গত পৌনে এক শ’ বছর ধরে বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে এসেছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রবক্তা তথাকথিত মুক্তবিশ্বের মোড়লরা।
আমরা মনে করি, বিশ্বে পরিপূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সত্যিকারের ন্যায়ভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা সবার আগে পাশ্চাত্যকেই মেনে চলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। জাতিসঙ্ঘকে ব্যবহার করে অন্যায় চলতে দেয়া বন্ধ করতে হবে। তা হলেই সম্ভব রাশিয়া বা চীনকে আগ্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নসিহত করা। অন্যথায় নয়।


আরো সংবাদ



premium cement