দরকার মূল্যবোধের চর্চা
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে আজকের শিশুদের ওপর। শিশুরা অনেকটা কাদামাটির মতো। তাদের যেভাবে গড়ে নেয়া হবে তারা সেভাবে গড়ে উঠবে। আমাদের বর্তমান অবস্থা হচ্ছে অস্থির। এখানে কোনো কিছুই ঠিকভাবে চলছে না। শিশুদের জন্য যে সার্বিক পরিচর্যা দরকার সেটি দেয়া যাচ্ছে না। তার ওপর চড়াও হচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষে মানুষের পাশবিকতার কালো থাবা। শিশুদের ওপর নেমে আসছে নানা ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতন। এমনকি যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে আমাদের শিশুরা। আমরাই আমাদের শিশুদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার বদলে তাদের ভেতরে বীজ বুনে দিচ্ছি মন্দ প্রবণতার। দুর্নীতি-অনিয়মের প্লাবনের মধ্যে এমন ভয়াবহ দুর্ব্যবহারের মুখোমুখি হয়ে বর্তমানের শিশুরা কিভাবে উন্নত মজবুত জাতি গঠন করবে ভবিষ্যতে?
বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) জানায়, শিশুদের ওপর ধর্ষণসহ নানাবিধ পাশবিকতা বেড়েছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা জানায়, গত বছর দেশে ৮১৮টি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৯৪ শিশুকে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৪ শিশুকে। এ ছাড়া নানাভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১১০ শিশু। সাধারণভাবে হত্যার শিকার হয়েছে ১৮৩ শিশু। ১৩৫ শিশুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এমজেএফ তুলনা করে দেখিয়েছে, তার আগের বছরের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে ৩১ শতাংশ। ২০২০ সালে ৬২৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এমজেএফ জানায়, পরিচিত লোকদের দ্বারাই শিশুরা ধর্ষিত হচ্ছে। বয়স্ক ব্যক্তিরা কৌশল করে শিশুদের লোকচক্ষুর অন্তরালে নিয়ে ঘৃণ্য ঘটনা ঘটায়। সাধারণত খেলার সময় শিশুদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে তারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা সুযোগ বুঝে ছাত্রীদের ধর্ষণ করছে। এ অবস্থায় দুর্বৃত্তদের হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করা কঠিন। সাধারণত পরিবার-পরিজন ও আস্থাভাজন শিক্ষকরা শিশুদের রক্ষা করার কথা। উল্লিøখিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ধর্ষণের শিকার শিশুদের সর্বনিম্ন বয়স দুই বছর।
২০২১ সালে আত্মহত্যা করেছে ৭৮ শিশু। এর মধ্যে ৫৭ ছেলে শিশু ও ২১ মেয়ে শিশু। একই সময় আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয়েছে ২৩ শিশু। ২০২০ সালে আত্মহত্যাকারী শিশুর সংখ্যা ছিল ৩৪। এসব আত্মহত্যারও অন্যতম কারণ ধর্ষণসংক্রান্ত। ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা, উত্ত্যক্ত হওয়া ও শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে বিচার না পাওয়ার মনোবেদনা সইতে না পেরে অনেক মেয়েশিশু আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যার অন্যতম কারণ পরীক্ষার ফল বিপর্যয় ও পরিবারের ওপর রাগ। এমজেএফ আরো জানায়, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা, অপহরণ, হত্যা, নির্যাতন, আত্মহত্যা, অপরাধে সংশ্লিষ্ট শিশুসহ মোট ১২ শ্রেণীতে ২০২১ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই হাজার ৪২৬ শিশু।
শিশুদের ওপর ধর্ষণসহ নানামাত্রিক নিপীড়নের ঘটনাকে আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে হালকা করে দেখতে পারি না। কয়েক কোটি শিশুর মধ্যে মাত্র কয়েক হাজার শিশুর ওপর ঘটা এ ধরনের ঘটনা আমলযোগ্য নয় বলে মনে করলে ভুল হবে। সাধারণত ধর্ষণসংক্রান্ত ঘটনা খুব কমই গণমাধ্যমে আসে। এসব ঘটনার ক্ষেত্রে পরিবেশ পরিস্থিতি এমন থাকে সবাই সেটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। সারা দেশে ধর্ষণসহ নানা ধরনের শিশু নিপীড়নের ঘটনা প্রকৃতপক্ষে এর চেয়ে বহুগুণ বেশি হতে পারে। সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হচ্ছে, শিশু নিপীড়নের লক্ষণগুলো। সংখ্যা বিচারের চেয়ে মানব চরিত্রের এই অন্ধকার প্রবণতার মোকাবেলা কিভাবে করব তা নিয়ে ভাবা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পরিবারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও খেলার সময় তাদের দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন উন্নত জাতীয় মূল্যবোধের চর্চা। কামনা-বাসনা যৌনপ্রবণতা সহজাত। উপযুক্ত শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা একে শৃঙ্খলিত করতে পারে। আমাদের জাতীয় পর্যায় থেকে এমন উন্নত শিক্ষা-প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা মনে করি, জাতীয় পর্যায় থেকে তার প্রণোদনা দরকার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা