কর্তৃপক্ষের জবাব নেই কেন?
- ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে আইনের অধীনে থেকে চলতে হয়। তারা যদি আইনের ঊর্ধ্বে উঠে যায় নাগরিক জীবনে বড় ধরনের নিরাপত্তাঝুঁকি সৃষ্টি হয়। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে নিজেদের চেইন অব কমান্ড থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তা না হলেও বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। উভয় ক্ষেত্রে দেশ, জনগণ এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিজে বড় দাগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে চার দিক থেকে। ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে একটি গুমের ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীতে যেখানে গুম হওয়া চারজনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। সহযোগী একটি দৈনিকের বিস্তারিত প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়ে এসেছে কিভাবে স্থানীয় পুলিশ ওই দুর্ঘটনায় ব্যবহৃত হয়ে গেছে।
নরসিংদীর রায়পুরায় একটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুটো গ্রুপ একে অপরের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল। এক দিকে দলটির ইউনিয়ন সভাপতি, অন্য দিকে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের সাথে সংসদ সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ছিল সুসম্পর্ক। অন্য দিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এলাকার জনসমর্থনে এগিয়ে ছিলেন। ২০১৭ সালে ২৬ মে ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থনে পুলিশ অভিযান চালায়। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রুপ মিয়াসহ আরো তিনজনকে পুলিশ আটক করে। অন্যরাও স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদধারী। তাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে মামলা ছিল। আটকের পর কিছু সময় তাদের স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। আত্মীয়স্বজন ভেবেছিল, তাদের নির্ধারিত সময়ে আদালতে তোলা হবে। ঘটনার পর এ পর্যন্ত তাদের আদালতে তোলা হয়নি। পুলিশের কোনো পর্যায় থেকেও তাদের আটকের স্বীকৃতি এখন মিলছে না। স্বজনরা বিভিন্ন কারাগারসহ সম্ভাব্য এলাকায় খুঁজতে গিয়ে উল্টো পুলিশের নিশানা হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকে পঙ্গু-খোঁড়া হয়ে গেছেন। গুম হওয়া পরিবারের স্বজনরা এখন এক দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
পত্রিকাটির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ভয়াবহ কিছু তথ্য উঠে এসেছে। এই তথ্যগুলো আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য অত্যন্ত গুরুতর। পত্রিকাটি নিজের কাছে এ ব্যাপারে একটি ভিডিও থাকার দাবি করেছে। ওই অভিযানের সময় প্রতিপক্ষের আট-নয়জন অনুসারী পুলিশের পোশাকে ছিলেন। প্রকাশিত বিবরণ মতে, এ ঘটনাটির আদ্যোপান্ত স্থানীয় পুলিশ সুপার, সার্কেল এসএসপি ও রায়পুরা থানার ওসি জানেন। বিগত বছরগুলোতে পুলিশের বহু অভিযান নিয়ে সন্দেহ ও বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। বিশেষ করে সরকারবিরোধীদের আন্দোলন সংগ্রামের সময় পুলিশের সাথে থাকা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের কথা অনেকে বলেছেন যারা মানুষের ওপর পৈশাচিক কায়দায় হামলা চালানো ও গুম খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষ কোনো অভিযোগ উত্থাপনেরই সুযোগ পায়নি। নরসিংদীর এ ঘটনাটি সেসব সন্দেহপূর্ণ কথিত পুলিশি অভিযানের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
২০১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এমপি রাজিউদ্দিন রাজুর একটি বক্তব্য পত্রিকাটি তুলে ধরেছে। তাতে রায়পুরায় সংঘটিত পুলিশি অভিযানের ব্যাপারে ইঙ্গিতে বলা কিছু কথা গুমের ঘটনাটির বিচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গুম হওয়া সদস্যদের নাম নিয়ে অন্যদের হুমকি দিয়ে তিনি সেখানে বলেন, ‘পুলিশ কোথায় তাদের খাইয়া ফালাইছে কেউ জানে না।’ পুলিশের ব্যাপারে তিনি আরো কিছু মন্তব্য করেন যাতে বোঝা যাচ্ছিল, বাহিনীটি আইন অনুযায়ী চলছে না। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে তা বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
নরসিংদীতে ক্ষমতাসীন দলের চার সদস্যের গুম হওয়াকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার কোনো অবকাশ নেই। পত্রিকার বিবরণ সঠিক হলে বোঝা যায়, এ ধরনের একটি অভিযান চালাতে পুলিশ কোনো ধরনের অস্বস্তি বোধ করেনি। তাহলে আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এমন বেআইনি কাজ করতে কি অভ্যস্ত হয়ে গেছে? এমনটি সত্যি হলে বলতে হয়, সারা দেশে মানুষের জীবন নিয়ে ঘটা ঘটনাগুলো আশকারা পাওয়ার কারণে নরসিংদীতে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের ওপর এমনটি ঘটতে পেরেছে। দেখা যাচ্ছে, পুলিশের মধ্যে ঢুকে পড়ছে ভাড়াটেরা যারা পোশাক পরে মূলত অপরাধকর্ম ঘটাচ্ছে। অন্য দিকে বাহিনীর লোকেরা এমন অপরাধ ঘটার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধা দিচ্ছে না। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ ঘটনাটির মোটিভ স্পষ্ট হয়ে গেছে। পুলিশের স্বার্থেই গুমের এ ঘটনাটি তদন্ত হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। এর দায় ক্ষমতাসীন সরকারের ওপরই বর্তায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা