প্রয়োজন সুষ্ঠু সমালোচনা সাহিত্য
- ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে একুশের বইমেলা দেশে বই প্রকাশের মৌসুম হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর বেশির ভাগ সৃজনশীল বই প্রকাশ পায় একুশে বইমেলা সামনে রেখে বা মেলার সময়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মেলার সময় যে হাজার পাঁচেক বই প্রকাশ পায় তার মধ্যে এক-পঞ্চমাংশ বইও মানসম্মত নয়। এ নিয়ে লেখক, প্রকাশক, পাঠক সবাই অসন্তুষ্ট। বলা হচ্ছে, ‘ভুঁইফোড়’ প্রকাশকরাই মানহীন বই প্রকাশের জন্য দায়ী।
সংবাদপত্রের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এবারের মেলায় অংশ নেয়া অর্ধেকের বেশি প্রকাশনা সংস্থাই মৌসুমি। তাদের স্টলগুলো মানহীন বইয়ে ভরপুর। বিশেষ করে শিশুদের বইয়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন এসব অচেনা লেখক ও প্রকাশক। এদের কারণে কেবল যে, পেশাদার লেখক ও প্রকাশকই ক্ষতিগ্রস্ত হন তা নয়, সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় পাঠকের; বিশেষত শিশু ও তরুণদের। তারা সারা জীবনের জন্য ভুল শেখে।
মানসম্মত বইয়ের প্রকাশনা নিশ্চিত করতে নানাজন নানা উপায়ের সুপারিশ করে যাচ্ছেন গত কয়েক বছর ধরে। কিন্তু সত্যিই কি কিছু করার আছে?
দেশে সত্যিকারের পেশাদার প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা গোটা বিশেক হবে কি না সন্দেহ। পাণ্ডুলিপি বাছাইয়ের জন্য এই গোটা বিশেক সংস্থারই কেবল নিজস্ব বাছাই কমিটি আছে, রিভিউয়ার আছে, সম্পাদনা পরিষদ আছে। বাকি সব সংস্থাই বই প্রকাশ করে প্রকাশকের পছন্দে বা তার লাভ-ক্ষতির বিবেচনা থেকে। এমনকি যে ক’টি সংস্থার সম্পাদনা পরিষদ আছে তারাও প্রায়ই এমন সব বই প্রকাশ করে যেটা স্পষ্টতই বাণিজ্যিক স্বার্থতাড়িত। এসব ক্ষেত্রে প্রাধান্য পান প্রভাবশালী মন্ত্রী, আমলা অথবা রাজনৈতিক নেতার ওপর লেখা যার পেছনে বিশেষ দলীয় তদবির থাকে। সুতরাং শুধুই ভালো ও মানসম্মত বই পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার দায় কারো মধ্যে আদৌ আছে কি না সংশয়ের অবকাশ থেকেই যায়।
ভালো বইয়ের প্রকাশনা নিশ্চিত করতে অনেকে বাংলা একাডেমিকে দায়িত্ব দিতে চান। বলা হচ্ছে, বই প্রকাশের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি দু’জন বিশেষজ্ঞকে দিয়ে রিভিউ করার যে নিয়ম অনুসরণ করে সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের জন্য সেই নিয়ম বেঁধে দেয়া যেতে পারে। কেউ বলছেন, প্রতিটি প্রকাশনা সংস্থায় অন্তত একজন করে সম্পাদক নিয়োগ করতে হবে। একজন বিশিষ্ট লেখক পরামর্শ দেবেন, বাংলা একাডেমি একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দিতে পারে, যে কমিটি প্রকাশিত বই পর্যালোচনা করে ভুলত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতে পারে। কেউ বা বলেন, মেলায় বই প্রকাশের আগে অন্তত দু’জন প্রতিষ্ঠিত লেখকের মতামত সংগ্রহ বা ‘রিভিউ’ করানো এবং তাদের নাম ওই বইতে যুক্ত করার একটি নিয়ম বাংলা একাডেমি আরোপ করতে পারে।
আমাদের বিবেচনায়, এসব পরামর্শ বাস্তবসম্মত নয়। কারণ বাংলা একাডেমি নিয়ম বেঁধে দিলেই তা সবাই অনুসরণ করবে এমন কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবেন না। এমনকি একাডেমি নিজেও সব নিয়ম অনুসরণ মেনে চলে, এমন নয়। যদি তা-ই করত তাহলে ভুঁইফোড় ও মৌসুমি প্রকাশকদের অন্তত মেলাপ্রাঙ্গণে স্টল বরাদ্দ পাওয়ার কথা নয়।
আমাদের বিবেচনায়, কোন বইটি ভালো, কোনটি নয়, তা কোনো কমিটি দিয়ে বাছাই করে দেয়ার প্রস্তাব অযৌক্তিক। মূল কাজ হলো, আজেবাজে বই যাতে পাঠক হাতে না তোলেন, তার ব্যবস্থা করা। মূলত বইয়ের গুণাগুণ বিচারের একমাত্র বাস্তবসম্মত উপায় হলো সমালোচনা সাহিত্য, যা এ দেশে প্রায় নেই বললেই চলে। মানোত্তীর্ণ এবং সারগর্ভ বই চিহ্নিত হতে পারে কেবল বিশেষজ্ঞ সমালোচকদের একনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সমালোচনার মাধ্যমেই। আর এই দায়িত্ব জাতীয় দৈনিকসহ সব গণমাধ্যমের; লিটলম্যাগ আন্দোলনেরও। এটি হলে প্রকাশক আজেবাজে বই প্রকাশ করলেও তা পাঠক গ্রহণ করবে না। প্রকাশককে টাকা দিয়ে যারা নিজের বই প্রকাশ করেন তারাও বিরত হবেন। প্রকাশনার অঙ্গনে বই নামের আবর্জনা দূর হবে। পাঠকও প্রতারণা থেকে বাঁচবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা