সরকারি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই
- ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকা এখনো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই এখানে গড়ে উঠেছে বসতি। প্রয়োজনীয় রাস্তা ও খোলা জায়গা রাখা হয়নি। নগর পরিকল্পনার কোনো ছাপ নেই ওই এলাকায়। ঘিঞ্জি পরিবেশে পুরো এলাকা একটি মনুষ্যসৃষ্ট ফাঁদ। দুর্ঘটনা ঘটলে ওই ফাঁদে আটকে মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারাবে। একই ধরনের দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে এলাকাটিতে। এর পরও এলাকাটি নিয়ে সরকারের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। কয়েক বছরের ব্যবধানে সেখানে বড় ধরনের দুটো অগ্নিকাণ্ডে ২০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের প্রাণহানি হয়। ওই সময় সরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনার তিন বছর পার হলেও সেসব সিদ্ধান্তের খুব কমই বাস্তবায়ন হয়েছে। আবারো যেকোনো সময় একই ধরনের অগ্নিদুর্ঘটার ঝুঁকি সেখানে বিদ্যমান রয়েছে।
চুড়িহাট্টার ঘটনায় রাস্তায় চলমান প্রাইভেট কারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সৃষ্ট অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বাণিজ্যিক-আবাসিক এলাকায় ছড়িয়ে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি ঘটায়। গাড়িটির পাশেই ছিল গ্যস সিলিন্ডারবাহী একটি পিকআপ। পিকআপে থাকা সিলিন্ডারেও তখন বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাশের একটি রেস্তোরাঁর গ্যাস সিলিন্ডার ও রাস্তার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরিত হয়। এর আশপাশে ছিল প্রসাধনী-প্লাস্টিক তৈরির কারখানা এবং রাসায়নিকের গুদাম। দাহ্যপদার্থের মজুদ থাকায় আশপাশের পাঁচটি ভবনে মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোতে একই সাথে রাসায়নিক পদার্থ, ব্যবসাকেন্দ্র ও মানুষের বসবাস ছিল। ফলে নিমেষে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অন্য দিকে ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। সরু রাস্তার কারণে ফায়ার ব্রিগেডও দ্রুত পৌঁছাবে সে ব্যবস্থাও ছিল না। অপ্রতুল রাস্তার কারণে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান শুরুর আগেই বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
ঘটনার পরপরই এলাকাটি থেকে রাসায়নিকের গুদাম স্থানান্তর ও এর ব্যবসা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। তিন বছরের মাথায় এসে দেখা যাচ্ছে, রাসায়নিকের গুদাম এখনো রয়েছে বহালতবিয়তে। ঘটনার ভয়াবহতায় তখন সরকারি তোড়জোড়ে যেসব গুদাম বন্ধ রাখা হয়েছিল; সেগুলোও ধীরে ধীরে খুুলে যায়। রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে নিতে ওই সময় শিল্প মন্ত্রণালয় দুটো অস্থায়ী জায়গা নির্ধারণ করে। নেয়া হয় ১৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প। বাস্তবে এখনো একটি প্রকল্পও পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১০ সালে নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের পর নতুন রাসায়নিক পল্লী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর সাত বছর পর পাশের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে যাওয়ার তিন বছর পার হলেও এ ব্যবসা স্থানান্তরিত হয়নি। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলছে। আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিকের ব্যবসা ও এর গুদাম সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় গত বছরের এপ্রিলে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজন প্রাণ হারান। নভেম্বরে সোয়ারীঘাটে একটি জুতার কারখানায় অন্য আরেকটি অগ্নিকাণ্ডে আরো পাঁচজন প্রাণ হারান। বিগত বছরগুলোতে এমন বহু ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ড অহরহ ঘটছে। দেশে দুই-একজনের প্রাণহানি কখনো গুরুত্ব পায় না। সে জন্য ওই সব অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও প্রতিকারের উদ্যোগও নেয়া হয় না। পুরান ঢাকার মতো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রাজধানীতে এখন অনেক। এসব এলাকায় যেকেনো সময় ঘটতে পারে নিমতলী-চুড়িহাট্টার মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা। তখনো সরকারের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি কিছু উদ্যোগ দেখা যাবে। সময় যত গড়াবে সেসব তোড়জোড় ফিকে হয়ে আসবে। অসহায় মানুষকে আগের মতো অপেক্ষা করতে হবে অগ্নিদুর্ঘটনার। এ চক্র যেন আমাদের নিয়তি। জাতি হিসেবে আমরা উদাসীন-বেখবর এটাই তার প্রমাণ। অবহেলায় সাধারণ মানুষের ভয়াবহ বিপর্যয় হয়। প্রশ্ন হচ্ছে আর কতকাল আমরা উদাসীন হয়ে থাকব? শুধু পুরান ঢাকা নয়, রাজধানীসহ যত জায়গা অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে প্রত্যেকটির জন্য সরকারের আলাদা পরিকল্পনা নেয়া উচিত। শুধু পরিকল্পনা নিয়ে বসে থাকলেই চলবে না, যথাসময়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। \
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা