২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কমেনি মাদক কারবার

বন্দুকযুদ্ধের কারণ উদঘাটন করুন

-

দেশে মাদক কারবার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে বেশি মাদক চোরাকারবার হয় সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজার দিয়ে। শীর্ষ চোরাকারবারিদের বেশির ভাগ ওই জেলার। অথচ মাদক নির্মূলের নামে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দেশে বড় বড় অভিযান চালিয়েছে। এতে মাদককারবারি বলে বহু মানুষ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি মানুষ বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। সহযোগী একটি দৈনিকের খবরে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। পত্রিকাটির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জেলাটিতে মাদকের বড় বড় চোরাচালান আগের চেয়ে অনেক বেশি হারে ধরা পড়ছে। আবার ক্রিয়াশীল মাদকের শীর্ষ কারবারিরা ওই জেলায় রয়েছে। প্রশ্ন হলো- মাদকের নামে ওই সব অভিযান প্রকৃতপক্ষে কী ছিল? যারা ওই সব অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন তারা আসলে কারা ছিলেন?
সরকারি বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থার মাদক জব্দের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কক্সবাজার হয়ে দেশে ইয়াবা চোরাচালান আগের চেয়ে বহু বেড়েছে। ইয়াবার সাথে নতুন করে আরো ভয়াবহ মাদক যুক্ত হয়েছে। সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ৪ মে। এটি এতটা কঠোর ছিল যে, এর স্লোগান ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ এ থেকেই অনুমান করা যায়। ওই অভিযানের শুরু থেকে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে ২৯৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। জেলার টেকনাফ উপজেলাতেই ১৭৪ জন হত্যার শিকার হয়। সেখানকার স্থানীয় কাউন্সিলর একরামুল হত্যা চোখ খুলে দেয়ার মতো হলেও তা থেকে কেউ শিক্ষা নেননি। ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া এক অডিওতে শোনা যায়- তিনি গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় মোবাইল ফোনে পরিবারের সাথে সংযুক্ত ছিলেন। গুলির আওয়াজে তার স্ত্রীসহ শিশুকন্যারা চিৎকার করে উঠেছিল। এর বিশ্বাসযোগ্য কোনো তদন্ত হয়নি। বিচার পাওয়ার কোনো সুযোগও রাখা হয়নি ওই পরিবারের জন্য। যদিও একরামুল ছিলেন যুবলীগ নেতা। এমনকি তার বিরুদ্ধে মাদক কারবারের কোনো তথ্যও ছিল না। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিশেষ শাখা ও কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় যুক্তরাষ্ট্র ঘটনাটি উল্লেøখ করেছে।
অন্য আরেকটি ঘটনা দেশের বিচারবহির্র্ভূত হত্যার মোড় ঘুরিয়ে দিতে যথেষ্ট প্রভাব রেখেছে। ওই ঘটনায় টেকনাফের তদানীন্তন ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে হত্যা করা হয় সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে। এসব ঘটনা জাতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হলেও সরকারি বাহিনী বন্দুকযুদ্ধ অব্যাহত রেখেছিল। যার ফল কোনো কল্যাণ বয়ে আনেনি। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অতিরিক্ত স্বাধীনতাপ্রাপ্তিতে যে মাদক কারবার কমেনি; পত্রিকাটির উল্লেখিত প্রতিবেদনে তাই উঠে এসেছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানের আগের বছর কক্সবাজারে ৮৫ লাখ ইয়াবা জব্দ করা হয়। অভিযানের বছর হয় এক কোটি ২৮ লাখ পিস। ২০২০ সালে হয় এক কোটি ৩২ লাখ ও ২০২১ সালে এক কোটি ৪৪ লাখ পিস ইয়াবা। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ইয়াবা জব্দের বর্ধিত ধারা অব্যাহত রয়েছে। এর সাথে নতুন যুক্ত হয়েছে ক্রিস্টাল মেথ ও আইস। এসব তথ্যে পরিস্কার, মাদকবিরোধী অভিযানের সাথে মাদক প্রতিরোধের কোনো সম্পর্ক নেই। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দাবি করছে, মাদক জব্দের বাড়তি সংখ্যার কারণ তাদের জোরদার অভিযান। সত্য হচ্ছে, যত মাদক বিক্রি হয়; এর মাত্র ১০ শতাংশ ধরা পড়ে। জাতিসঙ্ঘের মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ তথ্য জানাচ্ছে।
সঙ্গত কারণে এ কথা বলা যায়, সরকারি বাহিনীর অভিযান থেকে ভালো কিছু অর্জিত হয়নি। মাদক চোরাকারবার রোধ করা যায়নি। শুধু শুধু কিছু মানুষের প্রাণ গেছে। পরিণামে আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। সবার প্রত্যাশা, মাদক প্রতিরোধের নামে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে। একই সাথে মাদকবিরোধী অভিযানে কেন এত মানুষের প্রাণ গেল; তার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement