২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
খরচ উঠছে না আলুচাষিদের

কেজিতে লোকসান ৪ টাকা

-

দফায় দফায় বন্যা ও করোনা মহামারীতে সবজিতে বেশ টান পড়ে। বাড়তে থাকে শাকসবজির দাম। সেই সাথে বিগত বছরে দাম ভালো পাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আলু চাষে বেশি আগ্রহী হন কৃষকরা। মৌসুমের শুরুতেই দেখা যাচ্ছে উৎপাদন খরচ উঠছে না চাষিদের। তারা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। গত বছর মৌসুমের শুরুতে বাজারে আলু বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগে আলু বিক্রি হয় ১৩ টাকা কেজি দরে। এখন বাজারে প্রতি কেজি আলু পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে আট টাকা করে। অথচ উৎপাদন খরচ হয়েছে এর চেয়ে বেশি। ফলে লাভ তো হবেই না, উল্টো লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের। বিশেষ করে উত্তরের জেলা রাজশাহীর তানোর উপজেলার চাষিরা বিপুল লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
নয়া দিগন্তের তানোর (রাজশাহী) সংবাদদাতার পাঠানো এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয় জেলার তানোর উপজেলায়। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। উপজেলায় কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও অ্যাস্টেরিক জাতের আলু বেশি চাষ হয়। দামে ধস নামায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আলু আবাদ করে লোকসানের বোঝা এখন তাদের মাথায়। দিন যত যাচ্ছে লোকসান শেষ পর্যন্ত কত হবে সেই হিসাব কষছেন তারা। এখনো পুরোদমে আলু উত্তোলন শুরু হয়নি। তিন সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগ সংগ্রহ শুরু হবে। তখন আরো দাম কমার আশঙ্কা করছেন আলুচাষিরা।
দেশের অনেক জেলায় এখন আলু হচ্ছে। এটি কৃষকের অর্থকরী ফসলের অন্যতম। কৃষি বিভাগ থেকে ঋণ না দেয়ায় এনজিও থেকে চড়া সুদে পুঁজি নিয়ে আলু চাষ করতে হয় বেশির ভাগ কৃষককে। এবার আলুর দামে ধরা খেলে ঋণ শোধ কিভাবে করবেন তারা সেই দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে পড়েছে। চলতি মৌসুমে বীজসঙ্কট ও বীজের দাম বেশি ছিল। প্রতি কেজি আলুতে উৎপাদন খরচ এবার ১২ টাকা পড়েছে মাঠপর্যায়ের চাষিদের। আর মৌসুমের শুরুতে বিক্রি করতে হচ্ছে আট টাকা দরে। এতে করে মাঠপর্যায়ে আলুচাষিদের প্রতি কেজি আলুতে লোকসান গুনতে হচ্ছে চার টাকা করে। যারা জমি বর্গা নিয়ে আলু চাষ করেছেন তাদের লোকসান আরো বেশি হবে। প্রতি বিঘা আলুর জমিতে হাল-চাষ, সার, কীটনাশক, সেচ সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। আলু উৎপাদন হয় ৬০ কেজি করে ৬০ থেকে ৭০ বস্তা। ফলে আট টাকা দামে আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠেছে না। ব্যাপকভাবে তোলা শুরু হলে আলুর দাম আরো কমে যাবে। আরো ১৫-২০ দিন পর পুরোদমে আলু তোলা শুরু হবে। এভাবে দাম কমতে থাকলে আলুর মূল্য কত নিচে গিয়ে পৌঁছাবে কেউ তা অনুমান করতে পারছেন না। সঙ্গত কারণে লাভের আশায় আলু চাষ করে বিপুল টাকা লোকসান গোনার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। ফলে প্রান্তিক আলুচাষিদের অর্থনৈতিকভাবে কোমর ভেঙে যাবে। তারা আগামী বছর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না।
মূলত দুর্বল কৃষিবাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দেশের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল পান না। লাভের অর্থ হাতিয়ে নেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। এ থেকে বেরিয়ে আসতে বাজার ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন প্রয়োজন। তা না হলে কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে; তখন সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো আমরা। করোনাকালে প্রমাণিত হয়েছে কৃষিই হচ্ছে সবচেয়ে টেকসই খাত। এ কথা মাথাই রেখেই আমাদের কৃষিনীতির সংস্কার করতে হবে, যাতে কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল পেতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement