২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জাতীয় জরুরি সেবা কার্যক্রম

যথাসময়ে সহায়তা কাম্য

-

যেকোনো বিপদ কিংবা অতিপ্রয়োজনে দ্রুত প্রতিকার পেতে চালু করা হয়েছে জাতীয় জরুরি সেবা। ফোন নম্বর ‘৯৯৯’। যদিও ফোন করলে ভুক্তভোগী সেবা পাচ্ছেন; কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে- ফোন পাওয়ার পর সমস্যা সমাধানে বা সাড়া দেয়ার সময় নিয়ে। আর বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, কল দিলেও সঠিক সময়ে সেবা পাচ্ছেন না তারা। বর্তমানে জরুরি সেবায় সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে গড় সময় ২০ মিনিট। বিশ্বের অন্যান্য দেশে জাতীয় জরুরি সেবা সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিটের মধ্যে দেয়া হয়। সেই তুলনায় আমাদের অন্তত চার গুণ বেশি সময় লাগছে।
দেশে জরুরি সেবা পেতে বেশি সময় লাগার বিষয়ে কিছু ঘটনায় এমন হচ্ছে, সমাজে বহুল প্রচলিত সেই উক্তির মতো- ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রোগীটি মারা গিয়াছে।’ সর্বশেষ, ব্যবসায়ী আবু মহসিন খানের ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার দুঃখজনক ঘটনা এখানে উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে। গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ- তার ফেসবুক লাইভের শুরুর দিকেই এক ব্যক্তি ৯৯৯-এ ফোন করেন। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ২২ মিনিট। ১৭ মিনিট লাইভে কথা বলেছিলেন মহসিন খান। দ্বিতীয় আরেকটি ঘটনার কথা না উল্লেখ করলেই নয়। বছর দুয়েক আগে চট্টগ্রামের বাটার মোড় এলাকা থেকে এক পোশাককর্মী ৯৯৯-এ ফোন করে জানান, তিন বখাটে তাকে অনুসরণ করছে। দ্রুত পুলিশি সহযোগিতা প্রয়োজন। ৯৯৯ থেকে ঘটনাটি স্থানীয় পুলিশকে জানানো হয়। কয়েক ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে ওই পোশাককর্মীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ততক্ষণে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে কল করা ব্যক্তির অবস্থান জানতে পারলে খোঁজাখুঁজি না করে দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে পারত পুলিশ।
জরুরি সেবাসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ২৮-৩০ হাজার কল ৯৯৯-এ আসে। এর মধ্যে এক হাজারের মতো কল জরুরি সেবার থাকে। বাকি কল থাকে নানা ধরনের জিজ্ঞাসাবিষয়ক। ২০১৭ সালে চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সেবার জন্য কল এসেছে সাত লাখ ৩৩ হাজার ৯৩৭টি। এর মধ্যে ৭৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ পুলিশি সেবা চেয়ে করা হয়। ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ অগ্নিদুর্ঘটনার পর করা হয়েছে। ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ কল করা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে।
তবে শুধু শুধু কোনো বিভাগকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। যথাযথ সেবা পেতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে জরুরি সেবা বিভাগের রয়েছে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা। জরুরি সেবা পেতে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি সময় লাগে, কারণ অন্য দেশে যিনি জরুরি সেবা পেতে ফোন করেন; তাৎক্ষণিকভাবে তার অবস্থান সেবাকেন্দ্রে চলে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে ৯৯৯-এ কল করলে ভুক্তভোগীর কাছে জানতে চাওয়া হয় কোথায় অবস্থান। ঘটনা ও অবস্থান নিশ্চিত হতেই কিছু সময় চলে যায়। এরপর রয়েছে বড় বড় শহরের যানজট সমস্যা। একই সাথে দেশের কোনো থানায় জরুরি সেবার জন্য আলাদা যানবাহন নেই। আর চলাচলে কোনো নীতিমালা না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে ৯৯৯-এর সেবা পেতে বিলম্ব হয়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পার হলেও ৯৯৯-এর নিজস্ব কোনো দফতর নেই। ডিএমপির একটি স্থাপনায় সাড়ে পাঁচ শ’ জনবল নিয়ে জাতীয় জরুরি সেবা কার্যক্রম চলছে।
সবার প্রত্যাশা, জাতীয় জরুরি সেবা পেতে চাওয়া প্রত্যেকে যেন দ্রুত সেবা পান। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব ৯৯৯-কে সময়োপযোগী করে ঢেলে সাজাতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে পুলিশের একটি স্বতন্ত্র ইউনিট গঠন করতে হবে। প্রয়োজনীয় জনবল দিতে হবে। রেসপন্স টাইম কমানোর ব্যাপারে অন্যান্য দেশে কিভাবে জরুরি সেবা কাজ করে, তা জেনে আমাদের দেশের উপযোগী পরিকল্পনা নিয়ে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। কল লোকেশন তাৎক্ষণিকভাবে পেতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে। তবেই ভুক্তভোগীকে যথাসময়ে সেবা দেয়া নিশ্চিত করা যাবে বলে আমরা মনে করি। তখনই কেবল সম্ভব দেশে অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা-দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা।

 


আরো সংবাদ



premium cement