২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
শুকনো মৌসুমেও পদ্মার ভাঙন

মানুষের আতঙ্ক দূর করুন

-

ভাঙন এখন বাংলাদেশে একটি মহাবিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্যা ও ঝড়ের চেয়ে এটা কম ভয়াবহ নয়। সাধারণত বর্ষার পরই নদ-নদীর ভাঙন সর্বাধিক তীব্র ও প্রচণ্ড হয়ে ওঠে। এবারো তা হয়েছে। বরং শীতকালেও এখনো পদ্মার মতো বাংলাদেশের বড় নদীর মারাত্মক ভাঙন চলছে অব্যাহত গতিতে। ফলে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, বিশেষত বৃহত্তর ফরিদপুরের রাজবাড়ী উপকূলে পদ্মার ভাঙনে বিস্তীর্ণ জনপদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং আরো বহু এলাকা বিলীন হওয়ার পথে। নয়া দিগন্তের রাজবাড়ী প্রতিনিধির পাঠানো ও পত্রিকায় প্রতাশিত এক সচিত্র প্রতিবেদনেও এটা জানানো হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দের ছোট ভাকলা, দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন বন্ধ হয়নি। তিন ইউনিয়নের ১০টির মতো পয়েন্টে বিশেষ করে বিগত এক মাস ধরে ভাঙন চলছে। এ সময়ে শ’দুয়েক একরের মতো ধানী জমি নদীতে হারিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার শতাধিক পরিবার অন্য জায়গায় চলে গেছে। আর আতঙ্কে রয়েছে এক হাজারেরও বেশি পরিবার। দৌলতদিয়ার লঞ্চঘাট থেকে ছোট ভাকলার আন্তার মোড় অবধি ছয় কিলোমিটারে আবাদি জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে। এমনকি পদ্মা নদীর তীরবর্তী বহু স্থান দেবে নিচু হয়ে গেছে। এ দিকে কৃষকদের ক্ষেতে রয়েছে সরিষা, ভুট্টা, টমেটো ও করলাসহ নানা প্রকার সবজি। নদীভাঙনের ফলে এসব সবজি ক্ষেত থেকে তোলার ব্যাপারে চাষিরা আছেন বড় দুশ্চিন্তায়। দৌলতদিয়ার ব্যাপারী পাড়ার এক বাসিন্দা জানান, মাত্র কয়েক বছরেই তার বাবা ও চাচার ৬০ বিঘার মতো কৃষিজমি ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক বছর ধরে ‘নদীশাসন’-এর গালভরা বুলি কর্তৃপক্ষের তরফে আওড়ানো হলেও তার বাস্তব লক্ষণ নেই। কেবল বর্ষার মৌসুমে ভাঙন ঠেকাতে পদ্মা নদীতে কয়েকটি বস্তা ফেলা হচ্ছে। নতুন পাড়ার একজন বাসিন্দা বলেছেন, ‘প্রত্যেক বছর বর্ষায় বেশি ভেঙে গেলেও বিগত ২০-২৫ দিন ধরে বেশি নদীভাঙন দেখা যাচ্ছে। মাত্র এক মাসেই শতাধিক বিঘা জমি হারিয়ে গেছে। এটা চলতে থাকলে কিছু দিন পরে কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। বহু পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। এখনো ভাঙনের ভয়ে অনেকে চলে যাচ্ছেন। আমরাও এর জন্য তৈরি হচ্ছি।’ সাহাজদ্দিন ব্যাপারী পাড়ার জনৈক গৃহবধূর ভাষায়, ‘আমার কয়েক বিঘা জমি ও ঘর ছিল। গতবার নদীভাঙনে সব হারিয়েছি। এখন একজনের বাড়িতে উঠেছি দু’ছেলে নিয়ে। বৃষ্টি আর বাতাস বাড়লে ভাঙনও বাড়ে। গত ক’দিনে বাতাস অনেক বেড়ে গেছে।’ সরেজমিন দেখা গেছে, দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোট ভাকলা- এ তিনটি ইউনিয়নের কয়েক গ্রামে বেশি ভাঙছে।
দৌলতদিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ‘এ ইউনিয়নে কেবল এক মাসেই অর্ধশতাধিক একর ফসলি জমি ভাঙনের শিকার হয়েছে। তাই অর্ধশত পরিবার আতঙ্কে অন্যত্র গমনে বাধ্য হয়েছে। এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে আরো অন্তত ৫০০ পরিবার। নদীশাসনের বিষয়ে বারবার উল্লেøখ করা হলেও বাস্তব অগ্রগতি নেই এ ক্ষেত্রে। অবিলম্বে এ উদ্যোগ না নিলে আরো অনেক ক্ষতির শিকার হতে হবে।’ দেবগ্রামের চেয়ারম্যানের বক্তব্য, ‘কাওয়ালজানিতে ভাঙন বেশি। কয়েক পরিবার এলাকা ত্যাগ করেছে।’ তবে গোয়ালন্দের উপজেলা চেয়ারম্যানের আশ্বাস, ‘অতিসত্বর ভাঙন রোধের কাজ আরম্ভ হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি সাহেব ও পাউবোকে জানানো হয়েছে।’ অবশ্য তিনি বলেননি কখন ভাঙন রোধের কাজ শুরু হবে।
আমাদের প্রত্যাশা, রাজবাড়ীসহ দেশের সর্বত্র সর্বপ্রকার ভাঙন প্রতিরোধে অবিলম্বে সরকার পর্যাপ্ত স্থায়ী উদ্যোগ নেবে নদীশাসনসমেত। না হলে মানুষের আতঙ্ক দূর হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement