‘যশোরের কান্না’ থামাতে হবে
- ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
‘যশোরের দুঃখের নাম ভবদহ। যতদূর চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। ভবদহে দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এতে তিন হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পলি পড়ে এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের পথ মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নামছে না।’ এ কথা নয়া দিগন্তের একটি প্রতিবেদনের প্রথম অনুচ্ছেদ। পাঠিয়েছে পত্রিকাটির যশোর অফিস। সাথে ছাপানো একমাত্র ছবিতে দেখা যায়, ‘ভবদহের জলাবদ্ধতা দূর করতে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচে পানি বের করা হচ্ছে।’
ভবদহের বিলাঞ্চল নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি ও আন্দোলন হয়েছে অনেক। সারা দেশে এ ইস্যু ব্যাপকভাবে আলোচিত। তবুও আজ পর্যন্ত সমাধান হয়নি এর। যশোর জেলার অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর (মধুকবি মাইকেলের সাগরদাঁড়ি খ্যাত) উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার একাংশ নিয়ে ভবদহ। নিষ্কাশনের পথ না থাকায় কেশবপুরে জলাবদ্ধতার ফলে, এবার ১৬টি বিলের তিন হাজার হেক্টর-জুড়ে বোরো ধান হয়তো আবাদ করা যাবে না। এলাকার মৎস্যঘের মালিকদের লিজের জন্য শর্ত হলো- প্রতি বছর ৩০ ডিসেম্বরের আগেই বিলের পানি নিষ্কাশন করতে হবে। তবে এবার সময়ক্ষেপণ করে তারা উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ। অপর দিকে পানি নিষ্কাশনের জোর দাবিতে আন্দোলন চলছেই। এ বছর বোরো চাষ আর গরুর খাবারের জোগান কী করে হবে, তা ভেবে চাষিরা দিশেহারা। গতবার ভায়নাসহ ১৬ বিলের চার হাজার ২৩৫ হেক্টর জমির দুই হাজার ৬৮১ হেক্টরে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছিল বিলগুলোর আশপাশের ১৫ হাজার কৃষক পরিবার টিকে থাকার জন্য। সেই সাথে গবাদিপশুর খাদ্যের জোগান দিতে একমাত্র ফসল বোরো আবাদ করে আসছে।
কথা ছিল, ভবদহে মাছের ঘেরের লিজ গ্রহণকারীরা বিলের পানি নিষ্কাশন করে দেবেন যেন জলাবদ্ধতা জন্ম নিতে পারে না। এখন তা করতে গিয়ে উল্টো সময়ক্ষেপণ বা বিলম্ব করার গুরুতর অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধেই। ফলে বিশেষত বোরো চাষাবাদ ভবদহে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এর শুকনো দিনে এবং প্রশাসনের ‘আশকারা’ পেয়ে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস। জানা গেছে, প্রায় এক যুগ আগে বোরো ধান চাষে প্রলুব্ধ করে বিলের চার দিকে বেড়িবাঁধ, সেতু-কালভার্টের মুখ বন্ধ করা প্রভৃতি দ্বারা পানি আটকিয়ে মাছ চাষ আরম্ভ করেন লিজ-গ্রহীতারা। তারা ভূর্ভের পানি দিয়ে এ বিল ভরিয়ে ফেলায় অল্প বর্ষণেই বাড়িঘর ডুবে যাচ্ছে। কয়েকটি বিলের পানি সরার পথ, আসাননগর খালের পাড়ে ঘেরমালিকরা শতাধিক শ্যালো মেশিন রাখলেও ‘সুযোগ বুঝে’ তা বন্ধ করে দেন। এতে বাধ্য হয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য কৃষকদের রাতে পাহারা দিতে হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার বলেছেন, ‘চলতি বছর বিলের প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের টার্গেট থাকলেও এ যাবৎ অর্জনের পরিমাণ মাত্র ৯ হাজার হেক্টর। গতবার এখানে ১৬ বিলের এক হাজার ৫৫৪ হেক্টর পতিত ছিল। চলতি বছরেও পানির বাহুল্যের কারণে প্রায় তিন হাজার হেক্টর পতিত থাকতে পারে। তবুও পূর্ব মনিরামপুরের বহু পানি কেশবপুরের বিলে ফেলা হচ্ছে। যা হোক, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির পর আর ধান বোনা যাবে না।’ কেশবপুরে পাউবোর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর কথা, ‘শ্রী নদী পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভবদহের পানি সরছে না। ২৭টি বিলের পানি ডায়ের খালের স্লুইসগেট দিয়ে শ্রী নদীতে পড়ে থাকে। প্রকল্পে এ নদী থাকলেও ভবদহ প্রকল্পটি অনুমোদন ও বাস্তবায়ন ছাড়া সমাধান হবে না।’
আমাদের দাবি, অবিলম্বে ভবদহসহ যশোরের জলাবদ্ধতা নিরসন করুন। মানুষের কান্না থামাতে হবে। আলোচ্য প্রকল্প যত শিগগির অনুমোদন এবং কার্যকর করা হবে, ততই জনগণের মঙ্গল হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা