পাঁচ ভাইসহ এক দিনে ১৭ মৃত্যু
- সড়কে নিরাপত্তা বলে কিছু নেই
- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামার কোনো লক্ষণ নেই। পরিস্থিতি এমন যে, দেশে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থাপনা আদৌ আছে কি না সংশয় জাগে। অপঘাতে মৃত্যু সবসময়ই দুঃখজনক। এমন মৃত্যু ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য দুর্বিষহ যন্ত্রণা ও দুর্ভোগের কারণ। কিন্তু এর মধ্যেও এমন কিছু ঘটনা ঘটে যেগুলো মেনে নেয়া খুবই কষ্টকর। এমনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে গত মঙ্গলবার কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ায়। উপজেলার মালুমঘাট এলাকায় বেপরোয়া পিকআপের ধাক্কায় এক সাথে নিহত হয়েছেন পাঁচ ভাই। ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। নিহতরা ১০ দিন আগে তাদের বাবার শ্রাদ্ধকর্ম শেষে স্থানীয় মন্দির থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। ঘাতক পিকআপটির এখনো কোনো হদিস পায়নি পুলিশ।
শুধু এই ঘটনাই নয়, গত মঙ্গলবার সব মিলিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে মারা গেছেন ১৭ জন। নিহতদের আত্মীয়-স্বজনের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে উঠলেও সে কান্নার আওয়াজ শোনার মতো যেন কেউ নেই। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে পাঁচ হাজার ৩৭১টি। তাতে নিহত হয়েছেন ছয় হাজার ২৮৪ জন। আহত অসংখ্য।
সব দেশেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এটি অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এদেশে যেটি অস্বাভাবিক সেটি হলো- দুর্ঘটনার দায় নেয়ার মতো কেউ নেই। হাইওয়ে পুলিশ কী দায়িত্ব পালন করে বোঝা মুশকিল। এসব মৃত্যুর ব্যাপারে বিআরটিএ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।
একেকটি দুর্ঘটনার পর পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়, দায়িত্বশীলরা কিছুদিন সক্রিয় থাকেন, তারপর আগে যা ছিল সেই একই রূপ ধারণ করে। আবারো দুর্ঘটনা ঘটে, আবারো বেঘোরে প্রাণ হারায় মানুষ। পুরো জাতিই যেন নির্বিকার হয়ে থাকে। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে আন্দোলন হয়েছে। নিরাপদ সড়ক দাবিতে তোলপাড় হয়েছে দেশ। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর নতুন আইন বলবৎ হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উত্তরণ ঘটেনি। কারণ নতুন আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নেই।
নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচার চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সড়ক দুর্ঘটনার কিছু কারণ চিহ্নিত করেন। যেমন- সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাব, টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ, পথচারীদের অসচেতনতা, সড়ক ও মহাসড়কে মোটরসাইকেল এবং তিন চাকার গাড়ি বেড়ে যাওয়া, মহাসড়কে নির্মাণ ত্রুটি ইত্যাদি। এ ছাড়া ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের অবহেলাও অন্যতম কারণ বলে অনেকে মনে করেন।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সড়ক-মহাসড়কে ২৪ লাখ অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক রয়েছে। অদক্ষ চালকরা গাড়ি চালাবে আর নিরাপদ সড়ক আশা করব তা কী করে সম্ভব! তাই দুর্ঘটনা বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে। মানুষের চোখের পানিতে যতই নদী বয়ে যাক সড়কে মৃত্যুর রাশ টানা যাবে না। বরং দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে মৃত্যুর মিছিল।
নিরাপদ সড়ক দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখনো চলমান। কিন্তু নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠাসহ তাদের ১১ দফা দাবি আজো বাস্তবায়ন হয়নি। কায়দা করে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে।
গত বছরখানেক ধরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় মারা গেছেন বেশ ক’জন। জানা গেছে, সংস্থার নিয়মিত গাড়িচালক প্রয়োজন অনুপাতে নেই। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লার গাড়ি চালান। একটি সরকারি সংস্থায় এমন অরাজকতার খবর শুনলে ভিরমি খেতে হয়। কিন্তু এটাই চরম বাস্তব।
এবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দক্ষ চালক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন সিটি করপোরেশনকে। বলেছেন, ময়লার গাড়ি চালকের কারণে সম্প্রতি রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে, সে রকম যেন আর না হয়। সাবধান হয়ে যান। দক্ষ চালক নিয়োগ দিন। প্রয়োজনে তাদের প্রশিক্ষণ দিন।
আশা করা যায়, অন্তত সিটি করপোরেশনের গাড়িচাপায় আর কোনো মৃত্যু দেখতে হবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা