ঢাকা ওয়াসার অবিবেচনাপ্রসূত প্রস্তাব
- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
প্রতি বছর পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর রেওয়াজ আছে ঢাকা ওয়াসার। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতার ব্যত্যয় ঘটিয়ে গত এক যুগে গ্রাহকপর্যায়ে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে ১৬৪ শতাংশ। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০২০ সালে করোনার মধ্যেই ২৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। ফের ৪০ শতাংশ দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। কয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত সেবাধর্মী সংস্থাটির এক সভায় একলাফে অবিবেচকের মতো এত বেশি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী পয়লা জুলাই থেকে নতুন এ দর কার্যকরের বাসনাও ব্যক্ত করা হয়েছে। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বনির্ভর হতে উৎপাদন ব্যয় ও আয়ের ব্যবধান কমানোর কথা বলে করোনার মধ্যেও গত ২০২০ সালে অস্বাভাবিক দাম বাড়ানো হয়েছে। এবারো একইভাবে ৪০ শতাংশ দাম বাড়ানোর টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। এই সিদ্ধান্ত যে গ্রাহকবান্ধব নয়; এটি যে কারো কাছে বোধগম্য, শুধু ওই সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা এ কথা মানতে নারাজ। একবারে এত দাম বাড়ানো যে গণবিরোধী তা-ও বিবেচনায় নেই। লক্ষণীয়, ঢাকা ওয়াসা এমন অনেক প্রকল্প শেষ করেছে এবং আরো হাতে নেয়া হচ্ছে যেগুলো বিদেশী ঋণনির্ভর। ফলে সুদাসলে বিপুল অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে হয়। অন্য দিকে সরকার থেকেও ওয়াসায় ভর্তুকি দেয়া কমেছে। এ কারণে প্রকল্প ব্যয়সহ আনুষঙ্গিক সব টাকা গ্রাহকদের পকেট থেকে উসুলের ফন্দি এঁটেছে ঢাকা ওয়াসা। আসলে সংস্থাটির উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের কারণেই জনগণের ঘাড়ে সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো চেপে বসেছে এটি।
মহামারীর কারণে গত দুই বছর ধরে মুষ্টিমেয় বিত্তবান ছাড়া বেশির ভাগ নাগরিক চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত। এর ওপর অতি জরুরি পরিষেবা গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়লে সাধারণ মানুষের দুঃখ আরো বাড়বে এটিই স্বভাবিক। কিন্তু জবাবদিহিবিহীন সরকার দেশ পরিচালনায় থাকলে যা হওয়ার আমাদের দেশে বর্তমানে এমন অবস্থাই বিরাজ করছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ নিদারুণ অসুবিধায় দিনাতিপাত করছেন।
প্রতি বছরই ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর প্রবণতা লক্ষণীয়। এতে জনগণের কতটা ভোগান্তি বাড়ে; সে বিবেচনা মাথায় থাকে না। উচিত ছিল সেবাধর্মী একটি সংস্থা হিসেবে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা। তা না করে বরং উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের কারণে পানির দাম বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, ঢাকা ওয়াসার এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে যা কার্যকর নয়। ব্যয়বহুল প্রকল্পের দায় জনগণের ওপর চাপানো অনুচিত। নগরবিদদের মতো আমরাও মনে করি, ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস থেকে পানি সরবরাহ করতে বিদেশী ঋণে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে ঢাকা ওয়াসা। আরো কয়েক হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। বিদেশী ঋণের এ দায়ভার মেটাতে জনগণের পকেট কাটছে সংস্থাটি।
গ্যাস-বিদ্যুতের সাথে পানির দাম বাড়লে ঢাকায় বসবাসকারী গণমানুষের কষ্ট আরো বেড়ে যায়। বিষয়টি সরকারি সেবা-সংস্থাগুলোর বিবেচনায় নেয়া উচিত। জনগণকে বিপদে ফেলার কোনো অধিকার কারো নেই। আমরা মনে করি, আয়-ব্যয় সমন্বয়ের নামে পানির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ পানি ব্যবসায়িক পণ্য নয়, মৌলিক চাহিদা।
ঢাকা ওয়াসার পানির গুণগত মান এখনো বাড়েনি। ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পানি দেয়ার কথা বললেও এখনো দেয়া সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় পানির দাম বাড়ানো যুক্তিহীন। আগে অপচয় রোধ করা উচিত; তাহলে ঢাকা ওয়াসার অনেক ঘাটতি কমানো সম্ভব। তখন পানির অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন পড়বে না। এতে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আমরা মনে করি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা