ক্ষতি ছাড়া নাগরিকদের প্রাপ্তি নেই
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
দেশের প্রায় সব দৈনিকে একটি চিত্র বড় করে দেখা যাচ্ছে। বন্দুক হাতে একদল লোক আক্রমণ করছে অপর এক দলের ওপর। তাদের সাথে থাকা অন্যদের হাতেও ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা রয়েছে। এ যেন প্রাচীন যুগের দুটো গোত্রের মধ্যে চূড়ান্ত জয়-পরাজয় নির্ধারণী প্রাণঘাতী লড়াই। যে গোত্র জিতবে তারাই বেঁচে থাকবে; পরাজিত গোত্রকে পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করা হবে। এটা ইউপির সর্বশেষ সপ্তম ধাপের নির্বাচনের চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার একটি ইউনিয়নের চিত্র। ‘ইউপি নির্বাচন-২০২২’ সালের এটি একটি প্রতীকী চিত্র হিসেবে ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকতে পারে। আমাদের স্থানীয় নির্বাচন এখন ‘জোর যার মঠমুল্লুক তার’ পর্যায়ে নেমে এসেছে। এবারের প্রতিটি ধাপে এমন লক্ষণ দেখা গেছে। ক্ষমতাসীনদের মধ্যেই মূলত এই যুদ্ধ। অস্ত্র, অর্থ ও পেশিশক্তিতে সবচেয়ে শক্তিশালীরা ইউপি চেয়ারমান ও মেম্বার হতে পেরেছেন। এসব নির্বাচনে ভোটারের পছন্দের অপশনটি খুব কম ক্ষেত্রে দেখা গেছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রতিটি ভোট গ্রহণের সময় কে জিতল, কত ভোট পেল, এগুলো আলোচনায় আসার সুযোগই থাকছে না। বরং ভোটের আগে থেকে আলোচনায় থাকছে কে কতটা পেশিশক্তি প্রদর্শন করতে পারবে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ইউপি নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নিজ প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য একে-৪৭ রাইফেলের ভয় দেখিয়েছেন। মাদারীপুরে কালকিনির নির্বাচনে যুবলীগ নেতা প্রকাশ্যে হুমকি দেন যে, ‘তিনি দু’টি অস্ত্র নিয়ে মাঠে থাকবেন; কেউ যাতে তার সামনে আসার সাহস না দেখায়।’ এ ধরনের শত সহস্র হুমকি-ধমকি সাত ধাপের প্রত্যেকটিতে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে দিতে দেখা গেছে। অন্য দিকে প্রার্থীদের যোগ্যতা ও চারিত্রিক শুদ্ধতার যে মানদণ্ড নির্বাচন কমিশন ঠিক করেছে সেগুলো যাচাই-বাছাই হয়নি। ফলে চাঁদাবাজ, দখলবাজ, সরকারি সম্পদের ভক্ষক, মাদক কারবারি ও ধর্ষকেরা গায়ের জোরে নির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে এসব ক্ষেত্রে কার্যকর হতে দেখা যায়নি।
এতে করে নির্বাচনের প্রত্যেকটি দফায় সন্ত্রাস, রক্তপাত ও হানাহানির সীমাহীন বিস্তার দেখা গেছে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, এবারে ইউপি নির্বাচনে মোট মিলে ১০১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। আর নির্বাচনকে ঘিরে শত্রুতা, বিদ্বেষের নব নব সূচনা হয়েছে। এর জেরে যে আরো খুনোখুনির ঘটনা ঘটতে থাকে। এতে বহু সাধারণ ও নিরীহ মানুষও বলি হয়ে গেছেন। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় প্রাণ হারানো শিশু তাসিবের বাবা একজন রিকশাচালক। নির্বাচনের দিন শিশুটি কেন্দ্রের পাশে কৌতূহলবশত ঘোরাফেরা করছিল। একটি পক্ষ তাকে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী ভেবে কিরিচ দিয়ে নৃশংস কুপিয়েছে। ক্ষমতা পাওয়ার লোভ মানুষকে কতটা হিংস্র করে দেয় এবারের নির্বাচনে খুনগুলো তার প্রমাণ দিচ্ছে। এ শিশুটিকে এতটা নির্দয়ভাবে কুপিয়েছে যে, ঘটনাস্থলে সে প্রাণ হারিয়েছে। জানা যায়, কিছু কিছু এলাকায় ইউপি নির্বাচন নিয়ে শত্রুতা এতটাই বেড়েছে, সেখানে দফায় দফায় লাশ পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে নরসিংদী। সেখানে ১১টি লাশ পড়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাতটি লাশ পড়েছে বগুড়ায়।
ভোট গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রধান একটি অঙ্গ। এর মাধ্যমে জনগণের পছন্দের মর্যাদা দেয়া হয়। অর্থাৎ আমজনতা কী চায় সেটিই একমাত্র বিবেচ্য এখানে। নির্ধারিত সময় পরপর ভোট চর্চার কারণে ক্ষমতার নাটাই থাকে জনগণের হাতে। সবমিলিয়ে ক্ষমতা চর্চার কর্তা জনগণ। এর দ্বারা উপকৃতও হন তারা। এ কাজটি করার জন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র একটি কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করে। আমাদের দেশে ‘নির্বাচন কমিশন’ এ দায়িত্ব পালন করে থাকে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমাদের বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে জনগণের হাতে ক্ষমতার কর্তৃত্বও নেই, আবার এর দ্বারা তারা উপকৃত হবেন এর সুযোগও নেই। উল্টো, তারা প্রাণ হারাচ্ছেন, বড়দাগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমাদের প্রশ্ন, যেখানে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হচ্ছে না সেখানে এসব নির্বাচন আয়োজনের কী প্রয়োজন ছিল? এভাবে সরকারি কোষাগারের অর্থ ব্যয় করে সবাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা