বিপুল শিক্ষার্থী লেখাপড়ার বাইরে
- ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই হোঁচট খেল শিক্ষাকার্যক্রম। গত দুই বছর ধরে করোনার প্রভাবে শিক্ষা খাতে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণে সরকারের কোনো পদক্ষেপই দৃশ্যত কাজে আসছে না। এবার নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও অনেক জেলা উপজেলার স্কুলে বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছানো যায়নি। করোনার কারণে নতুন করে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া ছাড়া ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এখনো এ কার্যক্রমের বাইরে। আর অনলাইনে পাঠদান চালু থাকলেও শহরের কিছু ছাড়া গ্রামের বেশির ভাগ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের বাইরে রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষার বাইরে থাকায় ভবিষ্যতে আমরা সম্ভবত একটি অশিক্ষিত ও মূর্খ জাতি পাবো। এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, শিক্ষা খাত নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।
২১ জানুয়ারি থেকে করোনার ঊর্ধ্বগতির কারণে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। অনলাইনে ক্লাস চালু করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে নির্দেশনা দেয়া হলেও আশানুরূপ কোনো ফল আসছে না। বিশেষ করে গ্রামের স্কুলগুলোতে অনলাইনে ক্লাস নেয়া কিংবা শিক্ষার্থীদের যুক্ত হওয়ারও তেমন সুযোগ নেই। সম্প্রতি অনলাইন ক্লাসের এই ঘাটতিজনিত বিষয়টি মাউশির নজরেও আসে। মাউশি মাল্টিমিডিয়া ও অনলাইন ক্লাসের তথ্য এমএমসি ড্যাশবোর্ডে এন্ট্রি নিশ্চিতের নির্দেশনা দেয়। গত বছরের মতো নতুন শিক্ষাবছরে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়নি। কোনো ক্লাসই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে না পারাই এর অন্যতম কারণ।
সরকার যদি শিক্ষার্থীদের বছরের শুরু থেকেই শিক্ষাক্রমে যুক্ত করতে না পারে; তাহলে অদূর ভবিষ্যতে শিক্ষিত জাতি গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে। ফলে আগামীতে আমরা একটি মেধাহীন জাতি পেতে যাচ্ছি, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। এমন ভবিতব্য কারো জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।
বাস্তবতা হলো, করোনা মহামারী আমাদের অনেক কিছুই নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। কিন্তু গত দুই বছরে আমরা আমাদের করণীয় নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছি এবং নতুন বছরেও শিক্ষাকার্যক্রম বাস্তবতার আলোকে ঢেলে সাজাতে পারিনি। এর অন্যতম কারণ, শিক্ষা নিয়ে সরকারি মহলে চরম উদাসীনতা। এই উদাসীনতায় আমরা যদি নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলতে না পারি তাহলে অদূর ভবিষ্যতে জাতির কপালে চরম অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে তাতে সন্দেহ নেই। অথচ করোনা মহামারীর শিক্ষা নিয়ে আমরা সেই আলোকে পাঠ্যসূচি ও শিক্ষা কাঠামো সাজাতে পারতাম। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সহায়তা নেয়াই হতো বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু আমরা তা করিনি।
শিক্ষাবিদদের মতো আমরাও মনে করি, দেশের শিক্ষাকার্যক্রম শত প্রতিকূলতার মাঝেও চালু রাখতে অনলাইন কিংবা ইউটিউব ক্লাসের সহায়ক হিসেবে কাগজে মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তকের বিকল্প ই-ট্যাব প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে দেয়া সময়ের দাবি। এটা সম্ভব হলে কাগজে মুদ্রিত বইয়ের বিকল্প হিসেবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে শ্রেণিভিত্তিক পাঠ্যসূচি ওই ট্যাবে ডাউনলোড করে নিতে হবে। একই সাথে এখনো যেসব শিক্ষার্থী টিকাদান কর্মসূচির বাইরে রয়েছে; তাদের অতিসত্বর টিকা দিতে হবে। তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শ্রেণিকক্ষে সশরীরে পাঠদান শুরু করা সম্ভব হবে। অনেক দেশেই করোনার মধ্যেই পুরোদমে শিক্ষাকার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। আমরাই শুধু শিক্ষা নিয়ে গাফেল রয়ে গেছি। জাতীয় স্বার্থে বুদ্ধিমানের কাজ হবে সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে ফিরিয়ে আনা। তাতে করে এরই মধ্যে যে সর্বনাশ হয়েছে তার রাশ টেনে ধরা সম্ভব হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা