স্বস্তিতে নেই সাধারণ মানুষ
- ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
বাজারে জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। এমন কোনো নিত্যপণ্য নেই যার দাম যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে আছে। মহামারীজনিত অর্থনৈতিক দুরবস্থায় মানুষ যখন ধুঁকছে তখন নিত্যপণ্যের উপর্যুপরি দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মনে স্বস্তির অবশিষ্টটুকুও নিঃশেষ হওয়ার উপক্রম।
সর্বশেষ সরকারিভাবেই দাম বাড়ানো হলো সয়াবিন তেলের। অজুহাত, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার। মাত্র চার মাস আগে গত বছরের ১৯ অক্টোবর সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়। তখন সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৬০ টাকা ও খোলা সয়াবিন ১৩৬ টাকায় নির্ধারণ করা হয়। এখন নতুন করে নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮ টাকা বেড়ে ১৬৮ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বেড়ে ১৪৩ টাকা হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভোজ্যতেল বিপণনের সাথে জড়িতরা আগেই এক দফা দাম বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অঘোষিতভাবেই। সেটি ধর্তব্যে না নিয়েও দেখা যাচ্ছে, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো। কারণ গত দুই বছরের মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম এই নিয়ে অষ্টম দফা বাড়ানো হলো, যা অন্য কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে ঘটেনি।
এদিকে বাজারে পেঁয়াজের দামও বাড়ছে কোনো কারণ ছাড়াই। এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। সরবরাহ প্রচুর। এ সময় দাম কমার কথা। কিন্তু ঘটনা ঘটছে উল্টো। যে পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, সেটি এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় উঠে গেছে। এ ক্ষেত্রেও খোঁড়া অজুহাত দেখাচ্ছে বিক্রেতারা। গত রোববার পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ৯ থেকে ১০ টাকা বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। কৃষি বিপণন অধিদফতরের হিসাবে, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ প্রায় ২০ টাকা। অন্যান্য খরচসহ চাষি ২৫ টাকায় বিক্রি করলেও লাভ থাকে। সেই পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকায় ওঠার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না।
শুধু পেঁয়াজ বা সয়াবিনের ক্ষেত্রে নয়। মানুষের প্রধান যে খাবার চাল সেটিরও দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ১৮ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে যেকোনো সময় দেশে খাদ্যঘাটতি বা দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, রমজান মাসের বাড়তি চাহিদার বিষয়গুলো মাথায় রেখে খাদ্যশস্যের মজুদ নিশ্চিত করা উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারিভাবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে বলে মনে হয় না। সরকারের হাতে খাদ্য মজুদের যে হিসাব মন্ত্রণালয় দেয় তার সাথে খাদ্য অধিদফতরের গুদামে মজুদের চিত্রে মিল নেই। ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ প্রবাদের মতোই খাতা আর বাস্তবে অমিল হওয়ায় সিন্ডিকেটের মর্জির ওপর নির্ভর করে চালের বাজারদর। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে প্রচারণা চালানো হলেও চালের পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তুলতে পারেনি খাদ্য মন্ত্রণালয় বা খাদ্য বিভাগ। বাধ্য হয়ে চাল আমদানির পথে হাঁটছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম বাড়তি বলে খাদ্য আমদানিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করে পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করা গেলে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এ জন্য প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে ধান-চাল কিনতে হবে।
সঙ্গত প্রশ্ন হলো, বাজারে যদি চালের সঙ্কট না থাকে তাহলে দাম বাড়ছে কেন? আর মাত্র এক মাস পরই শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। চাল এবং অন্য অনেক পণ্যের চাহিদা বাড়বে বিপুলভাবে। এ জন্য এখনই প্রস্তুতি রাখার দরকার আছে। তা না হলে হয়তো দেখা যাবে চালসহ সব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এবং সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা