নিরাপত্তা নিয়ে আরো সক্রিয়তা দরকার
- ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি সম্পাদনের দুই যুগ হয়েছে। চুক্তির ধারাগুলোর বেশির ভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে। অথচ এখনো সেখানে শান্তি ফেরেনি। যদিও এ চুক্তি একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের বিশেষ মর্যাদা দিয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল। এটি করতে গিয়ে সেখানকার অ-উপজাতিদের সমান অধিকার থাকেনি। তাদের জমি কেনাবেচা ও অর্জিত সম্পদ রক্ষায় সীমাবদ্ধতা এসেছে। সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রে নাগরিকদের এক অংশের ওপর বিশেষ সুবিধাদান; বিপরীতে অন্যদের বঞ্চিত করার নীতি নেয়া হলেও সেটা পূর্ণ ফলদায়ক হয়নি। পাহাড়িদের বিচ্ছিন্ন একটি অংশ এখনো স্থানীয় মানুষের ওপর চাঁদাবাজি সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। সন্ত্রাসী এই গোষ্ঠীর হামলায় গত বুধবার রাতে সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য প্রাণ দিয়েছেন।
বান্দরবানের রুমার বাথিয়াপাড়ায় রাত ১০টার দিকে হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, স্থানীয় একটি সেনাক্যাম্পের কাছে সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি করতে যায়। খবর পেয়ে সামরিক বাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল টহলে বের হয়। এ অবস্থায় অতর্কিত হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। সন্ত্রাসী হামলায় টহল কমান্ডার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। এতে আরো একজন সেনাসদস্য আহত হন। অন্য দিকে সামরিক বাহিনীর টহল দলের পাল্টা হামলায় সন্ত্রাসীদের তিনজন প্রাণ হারায়। পরে অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে একটি সাব-মেশিনগান, ২৭৫টি গুলি এবং আরো বেশ কিছু গোলাবারুদ, নগদ অর্থ ও ইউনিফর্ম উদ্ধার হয়।
সামরিক বাহিনীর আন্তঃগণসংযোগ বিভাগ আইএসপিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়- এটি পার্বত্য অঞ্চলের সংগঠন গণসংহতি সমিতির (জেএসএস) অনুগামী একটি সশস্ত্র গ্রুপ। স্থানীয় মানুষের সাক্ষ্য থেকে তাদের পরিচিতির ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হয়েছে। পার্বত্য তিনটি জেলায় শান্তি চুক্তির ৪৮টি ধারা পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়েছে। ১৫টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। নানাবিধ জটিলতায় কয়েকটি ধারার পূর্ণ সুরাহা হয়নি। দুর্ভাগ্য হচ্ছে জেএসএসসহ সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বিলুপ্ত হয়নি। তারা চাঁদাবাজি সেখানে অব্যাহত রেখেছে। মাঝে মধ্যে স্থানীয় মানুষের ওপর সশস্ত্র হামলাও চালাচ্ছে। এমনকি তারা সশস্ত্রবাহিনীর ওপরও হামলা চালাচ্ছে। ২০১৯ সালের আগস্টে দু’বার সশস্ত্র গ্রুপ সামরিক বাহিনীর ওপর এমন হামলা করেছে। শান্তি চুক্তির আগে থেকে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলার বহু ঘটনা ঘটিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার ভূষণছাড়ায় নৃশংস গণহত্যা। ১৯৮৪ সালে চালানো ওই ঘটনায় জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তদন্ত করে বিচারের কাজটি অগ্রসর হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে দেশের ভেতর একটা আশঙ্কা রয়েছে। ভৌগোলিক ও জনমিতিক বৈচিত্র্যের সুযোগ নিয়ে একটা বিভেদ ঘটানো গেলে সার্বভৌম বাংলাদেশ বেকায়দায় পড়বে। প্রত্যেকটি দেশের নিরাপত্তাজনিত স্পর্শকাতর ইস্যু থাকে। বাংলাদেশের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ইস্যুগুলোর একটি। এই পরিপ্রেক্ষিতে অঞ্চলটি নিয়ে দেশের নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া দরকার। বাস্তবে এ নিয়ে যতটা চিন্তা ও মাথাব্যথা থাকা দরকার ততটা আমাদের নেই বলে মনে হয়। এই সুযোগই গ্রহণ করছে স্বার্থান্বেষী চক্র। মাঝে মধ্যে সেখানে সন্ত্রাসীদের যেসব কর্মকাণ্ড দেখা যায়; তাতে অনুমান করা অসঙ্গত নয় যে, আমাদের উদাসীনতা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তার সুযোগই নিচ্ছে সন্ত্রাসী ও সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী।
দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে থেকে আসা নিরাপত্তার শঙ্কাগুলো আমাদের সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। অর্থাৎ আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম আরো বেশি সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন যাতে করে যেকোনো নিরাপত্তাজনিত হুমকি আসার আগেই তা চিহ্নিত করা যায়। সময় মতো ব্যবস্থা নেয়া গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা আস্তানা গাড়তে পারে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালানোরও প্রশ্ন উঠবে না। আমরা আশা করব, সরকার পার্বত্য জনপদ নিয়ে এবার যথাযথভাবে মনোযোগ দেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা