২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নির্বিচারে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিকল্প নেই

-

দেশের পরিবেশ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে এবং হচ্ছে। পরিবেশের অবনতি বা সম্ভাব্য বিপর্যয় সৃষ্টির কারণগুলো গণমাধ্যমে নিয়মিতই তুলে ধরা হচ্ছে। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে এ বিষয়ে কী কী করণীয় সেই সুনির্দিষ্ট সুপারিশও করা হয়েছে। কিন্তু তাতে ফলোদয় হচ্ছে না। বায়ুদূষণে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বছরের পর বছর বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। শব্দদূষণ, নদীদূষণ, পলিথিনজনিত মাটিদূষণ সব দিকেই কেবলই ধস নামছে। শুধু রাজধানী নয়, দেশের সর্বত্র এই দূষণের থাবা বিস্তৃত।
গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, সবুজ অরণ্যবেষ্টিত দেশের পার্বত্য অঞ্চলে অবাধে চলছে পাহাড় কাটা। সাধারণ মানুষের হাতে নয়, যারা দেশের মানুষের স্বার্থে কাজ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত খোদ তাদের হাতেই চলছে অবৈধ সব কর্মকাণ্ড। গত বুধবার একটি দৈনিকের খবরের শিরোনাম ছিল, ‘পাহাড় কাটছেন জনপ্রতিনিধিরা’। পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় কিভাবে কারা পাহাড় কেটে পরিবেশের ভারসাম্য ধ্বংস করছে রিপোর্টে সেই তথ্য সবিস্তারে তুলে ধরা হয়। বলা হয়েছে, ওই উপজেলায় গত এক মাসে অন্তত ১১টি পাহাড় কাটা হয়েছে। পাতাছড়া, পিলাকছড়া, ছিনছড়িপাড়া, বৈদ্যটিলা, বলিপাড়া, কালাডেবা, সোনাইআগা, খাগড়াবিল, শ্মশানটিলা, নজিরটিলা ও ব্রতচন্দ্রপাড়ায় পাহাড়-টিলা কাটা হচ্ছে বলে খবরে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ক্ষমতাসীন দলের একজন স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধির নাম ধরে বলা হয়, তিনি টিলা কেটে সাবাড় করছেন। উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাহাড় যারা কাটেন তারা শাসক দলের ছত্রছায়ায় থাকেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না।
পার্বত্য অঞ্চলের আরেক জেলা কক্সবাজারেও অবৈধভাবে পাহাড় কাটা ও পরিবেশ ধ্বংসের মচ্ছব চলছে। একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কক্সবাজারের সাত উপজেলায় এক বছরে অন্তত ১৫০টি স্থানে পাহাড় কাটা হয়েছে। খবরে পরিবেশ অধিদফতরের এবং সরেজমিন অনুসন্ধানের তথ্য দিয়ে অভিযোগ করা হয় যে, জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ পাহাড় কাটার সাথে জড়িত। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যে বলা হয়, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে বান্দরবানের ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে অনুমোদন নিয়ে পাহাড় কাটার কাজ চলছে। কিন্তু রেললাইনের নাম দিয়ে অনেকে অবৈধভাবে পাহাড় কাটছে।
যারা আইন লঙ্ঘন করেন তাদের যুক্তির কোনো অভাব হয় না। অভিযোগ অস্বীকার করেই তারা রেহাই পেয়ে যান। এটাই দেশের প্রচলিত সংস্কৃতি। মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থানীয় পর্যায়ে সবার সাথে ‘সমন্বয়’ করে চলার শিক্ষা বা পরামর্শ প্রশাসনকে দেয়া হয় ক্ষমতার একেবারে উচ্চতর পর্যায় থেকে। সুতরাং দলীয় নেতা বা প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিপদে পড়ার চেয়ে সমন্বয়ের পথ বেছে নেয়া অধিকতর উত্তম বিবেচনা করে প্রশাসন। পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার এটাই অন্যতম কারণ। তারা মাঝে মধ্যে ছোট অপরাধীর জরিমানা করে বা অর্থদণ্ড দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন।
কিছু দিন আগে ক্ষমতাসীন দলের এক এমপির বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগে নোটিশ দিয়ে বিপদে পড়েছিলেন পরিবেশ দফতরের এক কর্মকর্তা। তাকে নিজের দফতরে তলব করে কিভাবে হেনস্তা করা হয় সেই দৃশ্য সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। কিন্তু এমপির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সুতরাং দেশের পরিবেশ কাদের হাতে কিভাবে ধ্বংস হচ্ছে সেটি অজানা কোনো বিষয় নয়।
রামগড়ের সরকারদলীয় নেতা যেমন বলেছেন, ‘কারো ব্যক্তিগত দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। যারা বেআইনি কাজে নিয়োজিত, তারা নিজ দায়িত্বে এসব করছে।’
অবৈধভাবে পাহাড় ও বনাঞ্চল ধ্বংস বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি। কিন্তু সমস্যাটি প্রশাসনের হাতে নেই। শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া পরিবেশ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার প্রাথমিক দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের : ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ‘রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো দল বা গোষ্ঠির নয়’ রোহিঙ্গারা এনআইডি নেয়ার অপচেষ্টা চালালে ইসিকে জানানোর আহ্বান আলিফের পরিবারকে এক কোটি টাকা দেবে শামসুল হক ফাউন্ডেশন জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই যাবে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে : জামায়াত আমির এক সপ্তাহ পর বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলের সিদ্ধান্ত সমন্বয়কদের ওপর হামলা হালকাভাবে দেখছে না সরকার কমছে ৪৭তম বিসিএসের আবেদন ফি গাজীপুরে কোরআন অবমাননার অভিযোগে কলেজছাত্র গ্রেফতার অযাচিত অস্থিরতা নয়, দায়িত্বশীল হোন সুখী : দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন

সকল