আধুনিক যুগে অবিশ্বাস্য!
- ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
সড়ক বা রাস্তাকে বলা হয় ‘সভ্যতার স্নায়ু’। তাহলে কি আমাদের বাংলাদেশ আজো অসভ্য রয়ে গেছে? একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের এ চরমোৎকর্ষের সময়ে এটা অবিশ্বাস্য। তদুপরি, এ দেশের উত্তরণ ঘটছে দরিদ্র দেশের সারি থেকে। এ দিকে সারা দেশে উন্নয়নের মহাজোয়ার (অবশ্য অনেকের এ জোয়ারে ডুবে মরার দশা)। তবে অবকাঠামোর ইতিবাচক রূপান্তর আর মহা মহা প্রকল্প যত নেয়া হোক না কেন, ঢাকার কাছে টাঙ্গাইল শহরের মাত্র ৭ কিমি. দূরে একটি সড়কের মাত্র এক কিমি. অংশও ৩৫ বছরে পাকা করা হয়নি। দেশে যে কী পরিমাণ বৈষম্য বিদ্যমান এবং উন্নয়নের নামে অসম বিকাশের প্রহেলিকা, তার নজির এটা। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই বাস্তবতা! একটি জাতীয় পত্রিকায় এ খবর ছবিসহ ছাপা হয়েছে এবার।
টাঙ্গাইল-নাগরপুর-আরিচা আঞ্চলিক মহাসড়কের অদূরে বান্দাবাড়ি গ্রাম। এখানকার ১১০ ঘরের বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হলো, একটি কাঁচা রাস্তা যা গ্রামের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত। এ গ্রামে কোনো প্রাইমারি স্কুল বা স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র নেই। পাথরাইল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের একটি গ্রাম এটা। এর অস্তিত্ব যেন কেবল কাগজে কলমে, বাস্তবে নাগরিকসেবার কোনো হদিস নেই এখানে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন আসে, নির্বাচন যায়। সরকার আসে, সরকার যায়। বান্দাবাড়িবাসীদের আজো চলতে হয় কাঁচা রাস্তায়। গ্রামের শিশুদের পড়ার জন্য যেতে হয় আরেক ইউনিয়নে; অর্থাৎ আটিয়াতে। সেখানকার গমজানী অথবা ভুরভুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের ভর্তি হতে হয়। আশপাশের গ্রামের রাস্তাগুলোর অনেক উন্নতি হয়েছে। অথচ বান্দাবাড়ির মানুষ পেয়েছে শুধু প্রতিশ্রুতি। এই গ্রামের একজন প্রবীণ বাসিন্দার কথা, রাস্তাটির সর্বশেষ উন্নয়ন হয়েছিল ১৯৮৬ সালে তৎকালীন চেয়ারম্যানের উদ্যোগে। তারপর আর কোনো ইউপি চেয়ারম্যান এদিকে নজর দেননি। ইউনিয়নের একপ্রান্তে বলে নির্বাচন ছাড়া ‘জনপ্রতিনিধিরা’ এ গাঁয়ে যান না। এর একজন গৃহবধূ বলেছেন, ‘বিয়ের পরে ১৪ বছরে এ রাস্তাটার কোনো উন্নতি দেখলাম না। গ্রামেরও কোনো উন্নতি হয়নি।’ বৃষ্টি হলে এ গ্রামে কেউ আসতে চান না। তখন রোগীকে হাসপাতালে নেয়াও এমন রাস্তায় অসম্ভব হয়ে যায়। একজন স্থানীয় যুবক বলেন, ‘গ্রামটির উন্নয়নের লক্ষ্যে কোনো ইউপি চেয়ারম্যান বা মেম্বার কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেননি। এমনকি, স্থানীয় সংসদ সদস্যও কোনো পরিকল্পনার দিকে নজর দেননি। এটি যেন পৃথিবী নয়, ভিন্ন একটি গ্রহের গ্রাম।’ স্থানীয় ইউনিয়ন মেম্বার দাবি করেন, তিনি ‘সদ্য নির্বাচিত’। তিনি এ গ্রামের ও রাস্তাটির বেহাল দশার বিষয় স্বীকার করেছেন। তার বক্তব্য, ইউনিয়ন থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বলে দীর্ঘদিন এ গ্রামে উন্নয়ন হয়নি। আমি চেষ্টা করব যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাসহ বান্দাবাড়ির উন্নয়নের জন্য।’ এ গ্রামের বিষয়ে অবগত বলে পাথরাইলের নতুন ইউপি চেয়ারম্যান জানালেন। তার ভাষায়, ‘এ গ্রাম আসলেই উন্নয়নবঞ্চিত। আমি নির্বাচিত হয়েই এ সড়কটি পাকা করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট এলজিইডি বিভাগ মাপজোখ শেষ করেছে। অবিলম্বেই এ কাজের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আমরা এ গাঁয়ের উন্নয়নে সর্বাবিধ সহায়তা দেবো।’
আমরাও আশা করছি, বান্দাবাড়ির দুঃখ অবশেষে ঘুচবে এবং এ গ্রামটিও দেশের অন্যান্য গ্রামের সমান উন্নত হবে। না হয়, এটা হবে জাতির জন্য খুবই লজ্জার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা