দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হোক
- ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি-অনিয়ম কোনো গোপন বিষয় নয়। সামান্য মিটার রিডার বা কেরানি কিভাবে কোটিপতি হয়ে ওঠেন সেসব কেচ্ছাকাহিনী নানা সময়ে গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। দেশবাসী জানতে পেরেছেন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি মূলত গ্রাহকদের জন্য রীতিমতো পীড়নযন্ত্রে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এসব বিষয়ে তদন্ত হয়েছে। দুদক থেকেও তদন্ত করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের বিষয়ে তদন্ত করে সংস্থাটি। কিছু ব্যবস্থাও নেয়া হয়। তাতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, তিতাসের সর্বনিম্ন থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যন্ত দুর্নীতি ও অনিয়ম জড়িয়ে আছে। দুর্নীতিবাজরা এতটাই প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাবান যে, তাদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না। এমনকি তারা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশও উপেক্ষার শক্তি রাখেন। তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম আর দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনে স্তূপ হয়ে আছে বলে গণমাধ্যমে বহুবার প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ও জ্বালানি বিভাগের ক্ষোভের কথাও এসেছে। কিন্তু তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাগামছাড়া অনিয়ম আর দুর্নীতি কোনোভাবেই থামছে না।
এসব বিষয়ে শাস্তিমূলক কঠোর ব্যবস্থা নিতে না পারার কারণেই যে দুর্নীতি আরো বিস্তৃত হয়ে পড়ে এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়ে যায় তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব নয়। দুর্নীতির যেকোনো ঘটনায় কঠোর শাস্তি দেয়া হলে এটা রোধ করা সম্ভব। সরকারিভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা হলেও তা ঘোষণার মধ্যেই রয়ে গেছে। রহস্যজনক কারণে জিরো টলারেন্স নীতি কোনো দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে প্রয়োগ খুঁজে পাওয়া দুরূহ। এসব কারণে তিতাসের সেবার মান দিন দিন নিম্নগামী। সম্প্রতি রাজধানীতে আবাসিক সংযোগে গ্যাসের চাপ না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। বস্ত্র খাতের মিলগুলো চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছে না। বিদেশ থেকে তরল গ্যাস আদমানি করে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যা বাস্তবসম্মত কি না প্রশ্ন আছে। আমদানি করা গ্যাস দিয়ে আর যা-ই হোক শিল্প-কারখানা চালু রাখা বা বিকাশ সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন না।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সম্প্রতি অভিযোগ করে বলেছে, গ্যাসের বদলে শুধু বাতাস বিক্রি করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ কোটি কোটি টাকার বিল আদায় করছে। আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোরও পাঁয়তারা চলছে। বিটিএমএ তাদের ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশন সংশ্লিষ্ট মিলগুলোতে দ্রুত ইভিসি মিটার স্থাপনের দাবি জানিয়েছে। মিটার লাগানো হলে তিতাস কতটুকু গ্যাস সরবরাহ করে তার সঠিক হিসাব পাওয়া সম্ভব। কিন্তু তিতাস সে পথে হাঁটে না। ১২০০ ইভিসি মিটার আমদানি করা হলেও অল্প কিছু মিলে সংযোগ দিয়ে অজ্ঞাত কারণে বেশির ভাগ মিলে মিটারের সংযোগ দেয়া হয়নি। অথচ এ বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। এটি দুর্নীতি অব্যাহত রাখার চেষ্টা বলে অনেকে মনে করেন।
দেশে গ্যাসকূপে মজুদ কমছে। তবে যেসব কূপে গ্যাসের স্তর নিচে নেমে গেছে, সেখানে কম্প্রেসার বসানো হলে গ্যাসের উৎপাদন ১০ শতাংশ বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সে উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে না। পাটশিল্প যেভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে সেভাবেই দেশের জ্বালানি খাত ধ্বংসের প্রক্রিয়া চলছে কি না ভেবে দেখার সময় এসেছে। আমাদের জানা মতে, পেট্রোবাংলা বা বাপেক্সকে জ্বালানি অনুসন্ধানে তেমনভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট মহলে অভিযোগ রয়েছে।
দেশের সার্বিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে শিল্পের বিকাশ সবচেয়ে জরুরি। তাই তিতাসসহ জ্বালানি খাতের সব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিমুক্ত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা