মাটির পুষ্টি রক্ষায় সচেতনতা নেই
- ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে খাদ্যের চাহিদাও। সেই সাথে কমছে ফসলি জমির পরিমাণ। বড়তি খাদ্যের জোগান দিতে নানা উপায়ে ফসলের ফলন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। অল্প জমিতে বেশি ফসল ফলানোর বৈজ্ঞানিক উপায় উদ্ভাবন করা হচ্ছে। ফসলের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন, রাসায়নিক সারের ব্যবহার, একই জমিতে একাধিক ফসল চাষের পদ্ধতি ইত্যাদি এরই মধ্যে কৃষক পর্যায়ে সুপ্রচলিত। আগে যে জমিতে বছরে একটি ফসল হতো, এখন সেটিতে দুই থেকে চারটি ফসল হচ্ছে। যে পরিমাণ জমিতে আগে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মণ ধান হতো, এখন সেই জমিতে ৩০ মণ পর্যন্ত ধান ফলানো সম্ভব হচ্ছে।
এসবই এখন পর্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু তা খুব বেশি দিন চলবে বলে মনে হয় না। কারণ, যে মাটি থেকে বাড়তি ফসল ফলানো হচ্ছে; সেই মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে। মাটির গুণাগুণ ধরে রাখতে যা করণীয় সে বিষয়ে তেমন কোনো আলোচনা বা সচেতনতা কারো মধ্যেই নেই। না সরকারিভাবে এ বিষয়ে প্রচারের উদ্যোগ আছে, না কৃষিবিজ্ঞানীরা কোনো ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন।
নয়া দিগন্তে রোববার প্রকাশিত এক রিপোর্টে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। মৃত্তিকাবিজ্ঞানীদের বরাতে জানানো হয়েছে, খাদ্যশস্য ফলানোর মাধ্যমে মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা মেটাচ্ছে যে জমি, সেই জমির স্বাস্থ্য ভালো নেই। মৃত্তিকাবিজ্ঞানীরা বলছেন, ফসলি জমির পুষ্টি বা উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। অনেক এলাকার মাটিতে জৈব পদার্থের অভাব দেখা দিয়েছে। কারণ আমরা মাটি থেকে খাদ্য নিই, কিন্তু মাটির পুষ্টি রক্ষায় যা করণীয় তা করি না। মাটিকে কিছুই দিই না। মৃত্তিকাবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাটির ছয়টি পুষ্টি উপাদান নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, গন্ধক, দস্তা ও বোরন। দেশের প্রায় সব এলাকার মাটিতেই এসব পুষ্টি উপাদানের কমবেশি ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জমির খাদ্য না দেয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা, পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস, ভূমিক্ষয়, নদীভাঙন ইত্যাদি কারণে মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হয়। অনেক জায়গায় মাটির এসিডিটি বা অম্লতা বেড়ে যাওয়া, ক্ষারত্ব বেড়ে যাওয়ায় মাটির গুণ নষ্ট হয়।
অথচ ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি মাটির গুণাগুণ ধরে রাখার কাজটি যথাযথভাবে করা হলে এই মাটি থেকেই আরো অন্তত ১৫-২৫ শতাংশ বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। এ জন্য দরকার শুধু মৃত্তিকাবিজ্ঞানীদের পরামর্শ মতো জমিতে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা। আর কোন জমিতে কী ধরনের মাটি রয়েছে, সেই মাটিতে কোন ফসল সবচেয়ে ভালো জন্মাবে এবং সেই মাটির গুণাগুণ ধরে রাখতে কী করণীয়, সে নির্দেশনা দেয়ার ব্যবস্থা আমাদের দেশে সরকারিভাবে রয়েছে। আমাদের একটি মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রতিটি উপজেলার মাটি নিয়মিত পরীক্ষা করে এবং তার ফলাফল প্রকাশ করেন। যেকোনো কৃষক সেই তথ্য জেনে নিজের জমির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফসলের চাষ করতে পারেন।
আমাদের বেশির ভাগ মাটিতে ২ শতাংশ জৈব পদার্থ আছে যা কৃষিকাজের উপযোগী বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। এর কম হলে চাষাবাদে সমস্যা হয়। এ জন্য মাটিতে যাতে দুই-তিন ভাগ জৈব পদার্থ থাকে সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। সেটি সম্ভব জৈব সার প্রয়োগের মাধ্যমে। আগের দিনে গরুর গোবর উৎকৃষ্ট জৈব পদার্থ হিসেবে কাজ করত। এখন গরু নেই বলে বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দেন ধানের পাশাপাশি সবুজ ফসল বা ডালজাতীয় ফসলের চাষ করার। চার-পাঁচ বছর পর হলেও অন্তত একবার ডালজাতীয় সবুজ ফসল ফলাতে হবে। তাহলে মাটিতে দুই শতাংশ জৈব পদার্থ থাকবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা