আমাদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে
- ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগের রাতে হয়েছে কি না, এ নিয়ে বিতর্ক করতে চান সিইসি কে এম নুরুল হুদা। নির্বাচনের তিন বছর পর এ ব্যাপারে মন্তব্য করলেন তিনি। তার দাবি, ‘রাতে ভোট হতে কেউ দেখেনি’। এর পক্ষে তার খোঁড়া যুক্তি, এ নিয়ে কেউ কমিশনে অভিযোগ করেনি। নির্বাচন কমিশনের কাজ হচ্ছে- সুষ্ঠু নির্বাচন আঞ্জাম দেয়া। এর জন্য যা যা দরকার সব এখতিয়ার ইসিকে দিয়েছে সংবিধান। আগের রাতে সিল মেরে ভোটবাক্স ভরা হচ্ছে কি না সেটা পাহারার দায়িত্বও ইসির। কিন্তু সেটা সিইসিসহ পুরো কমিশন প্রতিরোধ করেনি। তারপর বিষয়টি যখন নজরে আসে তার বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেননি সিইসি। ফলে সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো পক্ষ অংশগ্রহণের সুযোগ পায়নি। ক্ষমতাসীন দল নির্বাচন একচেটিয়া ছিনতাই করে নেয়। এমন প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালের সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। এবারের নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব পক্ষ এখন থেকেই সোচ্চার। ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি মন্তব্য করেছেন, ‘বাংলাদেশে ইইউ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়’।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে পরিস্থিতি এমন সৃষ্টি করা হয়, ইইউ ওই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারেনি। আমাদের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রও সে সময় পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারেনি। পর্যবেক্ষক দলের সদস্যদের সময়মতো ভিসা না দেয়ায় এটি ঘটেছিল। অথচ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইইউ ৮০০ সদস্যের পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রেরও বড় পর্যবেক্ষক দল আগের সব প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে এসেছিল। মনে রাখতে হবে- আমরা ‘গণতন্ত্র’ চর্চা করি। গণতান্ত্রিক বিশ্বের সাথে আমাদের নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। রয়েছে ওইসব দেশের সাথে বহু অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি এবং চুক্তি। গণতন্ত্র চর্চার সূত্র ধরে সেসব দেশের সাথে আমাদের সম্পর্কের মাত্রা ওঠানামা করে। সঙ্গত কারণে আমাদের গণতন্ত্র চর্চা নিয়ে পশ্চিমাদের আগ্রহের কমতি নেই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বিতর্কিত ও ব্যর্থ হলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গণতন্ত্র একটি টেকসই শাসনব্যবস্থা হিসেবে টিকে থাকতে না পারলে পশ্চিমাদের বৈশ্বিক প্রভাবও স্তিমিত হবে। ফলে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর গণতন্ত্র চর্চায় সাহায্য-সহযোগিতা করে তারা। এরই অংশ হিসেবে পশ্চিমা দেশগুলো এবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সোচ্চার।
তবে দেশে নিশি ভোটের পর এখন আরো অভিনব কায়দায় নির্বাচনে প্রতারণা-জালিয়াতি হচ্ছে। এর ওপর ইসির ন্যূনতম নিয়ন্ত্রণ নেই। বড় কথা, অন্যায় অনিয়ম প্রতিরোধ করে নির্বাচন-ব্যবস্থা সুষ্ঠু ভিত্তির ওপর পুনঃস্থাপনের কোনো প্রচেষ্টাই ইসি করছে না। বরং ক্ষমতাসীন দলের জালিয়াতির বৈধতা দেয়ার কাজে ব্যস্ত। ফলে আমাদের নির্বাচন-ব্যবস্থা সম্পূর্ণই ভেঙে পড়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেসে’ ইইউ রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে আমাদের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের আগ্রহের বিষয়টি বুঝতে কারো অসুবিধা হয় না।
মনে রাখা আবশ্যক, দেশ শাসনে গণতান্ত্রিক শাসনপদ্ধতি আমরা নিজেরাই বেছে নিয়েছি। জাতি হিসেবে এখনো ঘোষণা দেইনি, শাসনব্যবস্থা হিসেবে গণতন্ত্র পরিত্যাগ করেছি। কিন্তু এ দেশের গণতান্ত্রিক-ব্যবস্থা যে ঘোরতর দুর্যোগে পড়েছে; তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে এমন নিচু পর্যায়ের প্রতারণা বিশ্বের অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ যাবৎ দেখা যায়নি।
এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রথমেই আমাদের নির্বাচনী-ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। সরকার এবং নির্বাচন কমিশন মিলেমিশে একযুগে এই অনাস্থার পরিবেশ তৈরি করেছে, কেউ আর বিশ্বাস করতে পারছেন না; দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। সে জন্যই চারদিক থেকে অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে মূল দায়িত্বটি আমাদেরই নিতে হবে। দেশের নির্বাচন কমিশন কিভাবে গঠিত হবে, নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে; বিষয়গুলো নিজেরা বসে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে ফয়সালা করতে হবে। গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিশেষ করে পশ্চিমারা বন্ধু হিসেবে আমাদের শুধু সহযোগিতা করতে পারে। আমাদের উচিত, গণতান্ত্রিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা যাতে সব রাজনৈতিক দল ও সর্বস্তরের মানুষ ভোটব্যবস্থায় অংশ নিতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা