বাণিজ্যিক মনোভাব কাক্সিক্ষত নয়
- ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
সরকারের নাগরিক পরিষেবামূলক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসা। এই প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আয় গত এক যুগে বেড়েছে তিন গুণ। এ সময়ে পানির দামও বেড়ে হয়েছে প্রায় তিন গুণ। ২০০৯ সালে যেখানে আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট পানির মূল্য দিতে হতো পাঁচ টাকা ৭৫ পয়সা; সেখানে বর্তমানে পরিশোধ করতে হচ্ছে ১৫ দশমিক ১৮ টাকা করে। একই সাথে বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ইউনিট-প্রতি পানির মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে ৪২ টাকা করে। এর সাথে যেসব এলাকায় ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইন রয়েছে সেখানকার গ্রাহককে এর দ্বিগুণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়। সাথে আরো ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়।
পানির দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে ঢাকা ওয়াসার বক্তব্য, উৎপাদন ও বিতরণ ব্যয়ের সাথে বিক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্য করা। আরেকটি কারণ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর সাথে ব্যয় সমন্বয় করা। নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করতে ওয়াসা আইন ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী, ওয়াসা বোর্ড প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের দাম সমন্বয় করে থাকে। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটে ২০২০ সালে। ওই বছর একবারে ২৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। আবাসিক সংযোগে ১১ দশমিক ৫৭ টাকা থেকে একলাফে ১৪ দশমিক ৪৬ টাকা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ৩৭ দশমিক ০৪ টাকা থেকে ৪০ টাকা করা হয়। আর ২০১৬ সালে ঢাকা ওয়াসা পানির দাম দুইবার বাড়িয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের জুলাই থেকে আবাসিকে ১৪ দশমিক ৪৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ দশমিক ১৮ টাকা করা হয় এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা করা হয়। এ কারণে ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০০৯ সালে ওয়াসার রাজস্ব আয় ছিল ৪৪০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
সেবামূলক সংস্থাটি ২০০৯ সালের পর গত ১৩ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়ালেও এখনো সব এলাকায় সম্পূর্ণ গন্ধহীন পানি সরবরাহ করতে পারেনি। পানির দুর্গন্ধ আগের থেকে কিছুটা কমেছে বটে। এরপরও ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি ফুটিয়ে পান করতে হয়। তবে পানির সরবরাহ আগের তুলনায় ভালো। সরবরাহ নিয়ে এখন গ্রাহকপর্যায়ে তেমন অভিযোগ নেই।
সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসার এমডি জানিয়েছেন, রাজধানীতে এলাকাভিত্তিক আলাদাভাবে পানির দাম নির্ধারণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পরিকল্পনাটি সমীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর অনেক এলাকায় পানির বিলের সাথে সমপরিমাণ স্যুয়ারেজের বিল দিতে হয়। কিন্তু অভিজাত এলাকাগুলোতে তা দিতে হয় না, যা বৈষম্য বলেই আমাদের কাছে মনে হয়। এ ছাড়া লাইনের পানির জন্য প্রতি মাসে বিল দেয়া হয়; কিন্তু ভালো পানির জন্য ওয়াসারই এটিএম বুথ থেকে পানি কিনে আনতে হয়। ফলে পানি বাবদ গ্রাহকদের দু’বার করে অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
প্রতিটি দেশের সরকার নিজস্ব নাগরিকদের জীবনযাত্রা সহজ করতে অতিপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ভর্তুকি মূল্যে দিয়ে থাকে। এটিই সমকালীন রাষ্ট্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অথচ ঢাকা ওয়াসা সরকারের একটি নাগরিক পরিষেবামূলক প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও অতিমাত্রায় ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিচালিত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই মনোভাব কোনোভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়। আমরা মনে করি, ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করে স্বল্পমূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে রাজধানীবাসীর নাগরিক পরিষেবা কিভাবে আরো বাড়ানো যায় সে দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা