উপকরণের অভাব শিক্ষার্থীদের
- ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সরাসরি পাঠদান বন্ধ হওয়ায় বিকল্প হিসেবে অনলাইনে পাঠদান চালুর নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এভাবে পাঠদানে আগ্রহ কম শিক্ষার্থীদের। আগ্রহ তৈরি হয়নি শিক্ষকদেরও। বিগত দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন কোর্সের ডকুমেন্ট তাদের উপযোগীও নয়। এত দিনেও সেদিকে নজর দেয়া হয়নি। বাস্তবে অনলাইন পাঠদানে কোনো উন্নতি হয়নি। অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমের ওপর শিক্ষা বিভাগের তদারকিও নেই। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো, শিক্ষার্থীদের স্কুলের টিউশন ফি দিতে হচ্ছে। আবার মোবাইল ডাটাও কিনতে হচ্ছে। অথচ দেশের বেশির ভাগ মানুষের করোনাকালে আর্থিক দৈন্য বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে এত ব্যয় কিভাবে করবে সাধারণ মানুষ?
শিক্ষার্থীদের যে অনলাইনে পড়াশোনায় আগ্রহ নেই তা বিগত সময়ের কয়েকটি মাঠ জরিপের তথ্যেই উঠেছে। বিগত দীর্ঘ ছুটির সময় করা শিক্ষা অধিদফতরের এক জরিপের তথ্য, মাধ্যমিকের ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিত আর করোনাকালে ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী সংসদ টিভিতে প্রচারিত ক্লাসে আগ্রহ দেখায়নি। ২৯ শতাংশ বিদ্যালয় অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতির তথ্য সংরক্ষণ করেনি। উপস্থিতির তথ্য-বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত ছিল। অন্য দিকে, গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণা বলছে, করোনার কারণে আগের দেড় বছর বন্ধ থাকার সময় দূর-শিক্ষণে (সংসদ টিভি, অনলাইন, রেডিও ও মোবাইল ফোন) প্রক্রিয়ায় ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে, ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ অংশগ্রহণ করেনি; যেসব শিক্ষার্থী দূর-শিক্ষণ প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছে, তাদের মধ্যে ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ ডিভাইসের অভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। গ্রামীণ এলাকায় এই হার ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
২০২০ সালের মার্চ থেকে ১৭ মাস বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তখন শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠদানের উদ্যোগ নেয় সরকার। বিগত দেড় বছরের ছুটিতে ডিজিটাল মাধ্যমে লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার উদ্যোগ ছিল শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের। প্রথমে টেলিভিশন ও পরে বেতারে পাঠদান শুরু হয়। পাশাপাশি অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে ক্লাস নেয়া হয়। শ্রেণিকক্ষের বিকল্প পাঠদানে সমস্যাগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টাও চলে। তবে ডিজিটাল প্লাটফর্ম বিশেষ করে অনলাইনে শিক্ষার পরিধি বাড়াতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ মাধ্যমে শিক্ষার মূল শর্ত সব শিক্ষার্থীর জন্য ইন্টারনেট এবং অনলাইনে কোর্সের ডকুমেন্ট নিশ্চিত করা। অথচ দরিদ্র শিক্ষার্থীরা ল্যাপটপ, ইন্টারনেটের অভাবে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। ফলে তারা পিছিয়ে পড়ছে। গ্রাম ও দুর্গম অঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধার অভাব, যা অনলাইন শিক্ষায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আরেকটি চ্যালেঞ্জ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসংযোগ। ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের বৈষম্য।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক পর্যায়ে সংসদ টিভির মাধ্যমে শিক্ষাকার্যক্রম চালু করেছে। ক্লাসের গুণগত মান ও এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও টিভিতে প্রাথমিকের ক্লাস চালু করেছে। যদিও প্রান্তিক জনপদে সবার ঘরে টিভি নেই। যাদের টিভি আছে তারাও বিদ্যুৎবিভ্রাটে সঠিকভাবে ক্লাসে যোগদান করতে পারছে না। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার এই দীর্ঘ সময়েও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
করোনা সংক্রমণ আবারো বাড়তে পারে- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে এই তথ্য থাকার পরও অনলাইনে শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে, কম মূল্যে বা বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা দিতে কোনো কার্যক্রম হাতে নেয়নি। যথাযথ প্রস্তুতি আর পরিকল্পনা ছাড়াই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দ্বিতীয়বারের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ছুটি ঘোষণার নোটিশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইনে ক্লাস নেয়ার কথা বলেছে। দেশের সবখানে এ সুবিধা নেই। বিকল্প হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পৌঁছানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ আর ‘বাড়ির কাজ’। সেগুলো এখনো তৈরি হয়নি। ফলে শহর পর্যায়ের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে অন্যত্র গত দু’দিন ধরে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের নাগালের বাইরে আছে। শিক্ষা নিয়ে সরকারের এমন উদাসীনতা জাতির জন্য এক বড় অশনিসঙ্কেত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা