২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নির্বাচন কমিশন গঠন আইন সংসদে

শুরুতেই প্রশ্নবিদ্ধ আন্তরিকতা

-

সংবিধানে নির্দেশনা থাকলেও ৫০ বছরে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করা হয়নি। সম্প্রতি সেই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আইনটি সংসদে তোলা থেকে পাস করে গেজেট প্রকাশের জন্য হাতে সময় রয়েছে মাত্র এক মাস বা চার সপ্তাহ। ফলে এই আইনের ওপর যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি পাবে না। অংশীজনদের মতামত গ্রহণ বা জনমত গ্রহণের তো প্রশ্নই ওঠে না। এ জন্যই এই আইন পাসে তড়িঘড়ি করার অভিযোগ উঠেছে।
কয়েক সপ্তাহ আগেও আইন করার মতো সময় হাতে নেই বলা হলেও গত রোববার এ সম্পর্কিত একটি খসড়া আইন সংসদে উপস্থাপন করেছেন আইনমন্ত্রী। কিন্তু প্রস্তাবিত আইন আদৌ প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারবে কি না, জাতির আশা-আকাক্সক্ষা অনুযায়ী একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ, শক্তিশালী কমিশন গঠন করা এই আইনে সম্ভব হবে কি না সে বিষয়ে এরই মধ্যে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ নামে যে বিলটি মন্ত্রী সংসদে উত্থাপন করেছেন সেটি এর আগে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়। একজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনারসহ সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুশীলসমাজের পক্ষ থেকেও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। আইনটি পাসের আগে অংশীজনদের মতামত নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) বিভিন্ন মহল।
সাবেক সিইসি ড. শামসুল হুদা বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের মতো জায়গায় সৎ ও পরিচ্ছন্ন মানুষ প্রয়োজন। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে এবং তিনি অব্যাহতি পান, তাহলে তাকে নিয়োগ দিতে বাধা নেই।’ সম্ভবত এ কারণেই সরকারবিরোধী বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে বলেছে জাতির সাথে ‘তামাশা’।
সাবেক সিইসি শামসুল হুদা প্রস্তাবিত আইনের ওপর জনমত নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আইনটির যোগ্যতা প্রমাণ করা উচিত’। একজন অভিযুক্ত এবং অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তিকে কমিশনার নিয়োগের যে প্রস্তাব আইনে করা হয়েছে তা থেকেই সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া উন্নত গণতন্ত্রের দেশ বাদ দিলেও আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে নির্বাচন কমিশন গঠনে যেসব আইন রয়েছে সেগুলোও সামনে আছে। কোনোটিতেই এরকম অস্বচ্ছতা নেই।
ভুটান, নেপাল ও পাকিস্তানে সাংবিধানিক কাউন্সিল কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। পাকিস্তানের আইনে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সম্মতিতে প্রতিটি পদের জন্য তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়। মনোনীতরা পার্লামেন্টের একটি কমিটির সামনে শুনানিতে অংশ নেন। ওই কমিটি তাদের মধ্যে একজনের মনোনয়ন অনুমোদন করে এবং প্রেসিডেন্ট তাকেই নিয়োগ দেন। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা এসব পদের মনোনয়ন প্রশ্নে একমত হতে না পারলে তারা দু’জনেই আলাদাভাবে তিনজনের নাম প্রস্তাব করে পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে পাঠান। কমিটি তাদের মধ্য থেকেই একজনকে বেছে নেয়। স্পিকার ওই পার্লামেন্টারি কমিটি গঠন করেন ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সমসংখ্যক সদস্য নিয়ে। শ্রীলঙ্কায়ও ইসি গঠনের পদ্ধতি যথেষ্ট নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক। আমাদের দেশে পাকিস্তানের চেয়েও দুর্বল একটি আইন করা হবে তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।
প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় সংশোধন করে তা সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক কাঠামো দেয়া জরুরি; যাতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হয়। এ জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি ক্ষমতাসীন দলের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা।


আরো সংবাদ



premium cement