শূন্যহাতে ক্লাসে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা
- ২০ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
প্রতি বছরের মতো চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে বিনামূল্যের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সরকার। কিন্তু বেশ কিছু মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সাথে পুনঃদরপত্রে চুক্তি করায় বই ছাপার কাজ শুরু করতেই এক মাস সময় অপচয় হয়। এরপরও চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে দেশের সব স্কুলে বই পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবি। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার এবার প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ৩৫ কোটি বই ছেপেছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৪টি। মাধ্যমিকে ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৬টি বই আছে।
কেন এই ব্যর্থতা এ সম্পর্কে এনসিটিবির দাবি, বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির প্রথম থেকে গ্যাস সরবরাহ লাইনের ত্রুটির কারণে তা মেরামত করতে সময় লেগে যায়। ফলে কাগজ উৎপাদনকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পুস্তক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে ঠিক সময়ে কাগজ সরবরাহ করতে পারেনি। পুরো এক সপ্তাহ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণকাজ বন্ধ ছিল। যে জন্য বই ছাপা ও স্কুলগুলোতে পাঠ্যবই পৌঁছাতেও সময় লেগে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শুধু গ্যাসসঙ্কট এবং কাগজ উৎপাদনের ঘাটতির কারণে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে বিলম্বিত হচ্ছে না, একেবারে শেষ সময়ে দুর্বল কিছু প্রতিষ্ঠানও বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজ পায়। যেসব ছাপাখানার বই মুদ্রণের সক্ষমতা দুই লাখ কপি; সে সব মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে চার লাখ কপি বই ছাপানোর কার্যাদেশ; এতে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। বই ছাপানোর কাজে পিছিয়ে পড়ছে ওইসব ছাপাখানা। লক্ষ্য ছিল ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব বই ছাপানোর কাজ শেষ করা। কিন্তু তা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। প্রকৃত চিত্র- কবে নাগাদ বিনামূল্যের বই সব শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছাবে এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউ-ই। এরপরও এনসিটিবি দিবাস্বপ্ন দেখছে, চলতি মাসের মধ্যেই বই না পাওয়া সব জেলা-উপজেলায় পাঠ্যপুস্তক পৌঁছাতে পারবে। সব শিক্ষার্থীর হাতে হাতে নতুন বই শোভা পাবে। নতুন বই পেয়ে পুরোদমে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে পারবে।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় প্রতিষ্ঠান এনসিটিবি বলছে- দেশের সব জেলা-উপজেলার বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই পৌঁছে দেয়া হয়েছে। শুধু কিছু স্কুলে এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বাস্তবে ঢাকা ও এর আশপাশেরই কয়েকটি জেলা-উপজেলার বহু বিদ্যালয়েই মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর পুরো সেট বই এখনো পৌঁছেনি। এ থেকে সারা দেশের চিত্র অনুমান করতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
প্রকৃতপক্ষে যে সব স্কুলে পুরো সেট বই পৌঁছায়নি, সে সব বিদ্যালয়ে সেট ভেঙে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়েছে। যেমন- অষ্টম শ্রেণীর মোট বই ১৪টি। ছাত্র-ছাত্রীদের দেয়া হয়েছে আট থেকে ১০টি বিষয়ের বই। আবার অনেক স্কুল কোনো বই-ই পায়নি। ওইসব স্কুল খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীরা খালিহাতেই শুধু খাতা-কলম নিয়ে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হচ্ছে। এতে করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান দেয়া বা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না শিক্ষকদের। স্কুল খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা কিছুই হচ্ছে না। শুধু শুধু হাজিরা দিতে স্কুলে যেতে হচ্ছে তাদের।
এমনিতেই করোনা যখন মহামারী আকারে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে তখন থেকেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা গভীর খাদে নিমজ্জিত। শিক্ষাকার্যক্রমের সেই ক্ষতি পুষিয়ে ভালোভাবে ফের কিভাবে চালু করা যায়, সে বিষয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কথা বলা অসঙ্গত নয় যে, জাতীয় শিক্ষাকার্যক্রমের দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তাদের সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ। বিনামূল্যে শিশু-কিশোরদের পাঠ্যবই যথাসময়ে বিতরণ করতে না পারায় আবার তা সবার সামনে এসেছে মাত্র। তবে সব কিছুর পরও আমরা আশা করতে চাই, যেসব বিদ্যালয়ে এখনো পাঠ্যবই দেয়া সম্ভব হয়নি; সেগুলোতে দ্রুত পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা