প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ব্যাহত
- ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
গত চার দশক ধরে দেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে আমাদের দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারে রূপান্তরিত হয়ে শহরাঞ্চলে বসবাসের প্রবণতা। ফলে কর্মজীবী নারীর শিশু লালন-পালনে দেখা দিয়েছে নানাবিধ সমস্যা। এসব সমস্যার সমাধানে দেশে গড়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারি দিবাযত্ন কেন্দ্র। কিন্তু ডে-কেয়ার সেন্টার বা দিবাযত্ন কেন্দ্রের সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন সেবাগ্রহণকারী শিশুদের মায়েরা। বেসরকারি ডে-কেয়ারে যাওবা যত্ন করা হয়; সেই তুলনায় সরকারি দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলোর হাল বড়ই করুণ। একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদনে এ নিয়ে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের কর্মজীবী নারীদের আর্থিক ক্ষমতায়নে ১৯৯১ সাল থেকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন মহিলাবিষয়ক অধিদফতর দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করছে। রাজস্ব খাত ও প্রকল্প থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে সরকারিভাবে মোট ১১৯টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। তবে রাজস্ব খাতের তুলনায় প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত কেন্দ্রগুলোর অবস্থা একটু ভালো। অন্য দিকে শিশু একাডেমির মাধ্যমে জাতিসঙ্ঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) অর্থায়নে বেসরকারি সংগঠন ফুলকি ৪০টি কেন্দ্র পরিচালনা করে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে ১৫টি কেন্দ্র চা-বাগান মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। রাজধানীতে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা দিবাযত্ন কেন্দ্রে ব্যয় বেশি। মধ্যম মানের বেসরকারি কেন্দ্রে ভর্তিতে ১০-১৫ হাজার টাকা এবং মাসে ৮-১০ হাজার টাকা নেয়া হয়। এরপরও অনেক কর্মজীবী মা বাধ্য হয়ে সেখানে সন্তানদের ভর্তি করান।
যে উদ্দেশ্যে সরকারি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলো প্রতিষ্ঠা, কাক্সিক্ষত সেই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। এসব কেন্দ্রে রয়েছে নানান ঘাটতি। কোথাও শিশুরা দুর্ব্যবহারের শিকার হয়, কোথাও শিক্ষিকা ও স্বাস্থ্য শিক্ষিকা নেই। এসবের পরিবেশ এমন, অনেক কেন্দ্রে দিনের বেলায়ই মশা ঘোরে। বিছানার চাদর ময়লা, চার পাশ স্যাঁতস্যাঁতে। খেলনা তেমন কিছু নেই। শিশুদের বয়স আলাদা হলেও সবার জন্য খাবার একই। অথচ দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলোতে শিশুদের সম্পূর্ণ মাতৃস্নেহে লালন-পালন করার কথা। তাদের শারীরিক-মানসিক বিকাশে শিক্ষা, খেলাধুলা, বিনোদন, সুষম খাবার ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা থাকার কথা। কাগজে-কলমে পরিষ্কার রাখা, শিশুদের পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তোলাসহ আরো দায়দায়িত্বের কথা বলা আছে। বাস্তবে অবস্থা ভিন্ন। এগুলোতে শিশুর মানসিক বিকাশেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। সঙ্গত কারণেই কর্মজীবী মায়েরা তাদের শিশুসন্তানদের সেখানে রাখতে উৎসাহ পান না।
সবার জানা, শিশুর ছয় বছর বয়স পর্যন্ত সময়টি গুরুত্বপূর্ণ। আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় প্রস্তুত করা, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, যোগাযোগ দক্ষতা, মানুষকে চেনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো বিষয়গুলোতে ভিতটা তৈরি হয় এ বয়সে। অভিভাবক বা শিশুদের কেউ বিকল্প সেবা দিলে ওই সেবাদানকারীদেরও এ দক্ষতাগুলো থাকতে হয়। এই বয়সে শিশুর নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হলে তার মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। তাই কেন্দ্রগুলোতে শিশুদের মানসিক বিকাশের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার। দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলোতে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয় বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখা অত্যাবশ্যক। সরকারি দিবাযত্ন কেন্দ্রে সেই পরিবেশ অনুপস্থিত। অন্য দিকে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর লক্ষ্য থাকে সেবার চেয়ে বেশি বাণিজ্যের দিকে।
আমরা মনে করি, বর্তমান প্রবণতায় দিন দিন কর্মজীবী মায়েদের সন্তান লালন-পালনের সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না। তাই সময়ে দাবি সরকারিভাবে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো ও পরিবেশের দিকে নজর দেয়া। এ জন্য প্রয়োজন, সুষ্ঠু কর্মিব্যবস্থাপনা, কেন্দ্রগুলোর জন্য নগদ অর্থের ব্যবস্থা রাখা, কর্মীদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, পরিচালনাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে ২০২১ সালে প্রণীত আইনের বিধিমালা দ্রুত চূড়ান্ত করে সেই আলোকে নজরদারি করা। সরকারি-বেসরকারি ডে-কেয়ারে তখনই সম্ভব সেবার মান নিশ্চিত করা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা