২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সবজি চাষে কৃষকের মুখে হাসি

গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণের সঞ্চার

-

বাংলাদেশে এক সময় কৃষিই ছিল আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। তবে কয়েক দশক ধরে দেশে নতুন নতুন শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জাতীয় অর্থনীতিতে দিন দিন কৃষির অবদান কমছে। ফলে কৃষকের ভূমিকাও গৌণ হয়ে পড়ছে। এর পরও কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষির এত উন্নতি সত্ত্বেও প্রতি বছরই একাধিক শস্য উৎপাদনে ভর্তুকি দিতে হয় কৃষককে। মাঝে মধ্যে উৎপাদিত শস্যের দাম এত কম থাকে যে, ক্ষুব্ধ হয়ে কৃষককে মাঠের পাকা ধান না কেটে আগুন ধরিয়ে দিতেও দেখা গেছে। এমন বাস্তবতায় কিছুতেই কৃষকের সুদিন ফিরছিল না। দেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির মেরুদণ্ডই যেন ভেঙে পড়ছিল।
আশার কথা, বিগত কয়েক বছরে কৃষিতে বৈচিত্র্য আসায় নানা জাতের ফসল ফলানোয় চাষিরা মনোযোগী হয়েছেন এবং কৃষি খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে সবজি চাষির বেলায় কথাটি শতভাগ সত্য। সবজি চাষে গ্রামীণ অর্থনীতিতে আবার প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। দেখা গেছে, ধান-পাটের চেয়ে অনেক বেশি লাভ হচ্ছে সবজি উৎপাদনে। মাঠপর্যায়ে কর্মরত চাষিদের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ঠিকমতো ফলন হলে অন্য ফসলের তুলনায় সবজিতে লাভ কয়েকগুণ বেশি। যেখানে এক বিঘা জমিতে ধান ও পাট চাষ করলে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হয়, সেখানে সবজি চাষ করলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ পাওয়া যায়। এ কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতি বছরই সবজি চাষ বাড়ছে। সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন চাষিরা।
সবজি চাষে কৃষক যে লাভবান হচ্ছেন- এর একটি উদাহরণ পাবনা জেলা। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই জেলার ৯টি উপজেলার সহস্রাধিক কৃষক বিগত সাত বছর ধরে কোনো লোকসান না দিয়ে ধারাবাহিকভাবে সবজি আবাদ করে লাভের মুখ দেখছেন। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৯টি উপজেলায় ৩৫ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজির চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদ হয় ১২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ ৫৭ হাজার ১৮০ টন সবজি। আর শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯৮ টন সবজি। মোট উৎপাদিত হচ্ছে ৮ লাখ ২৪ হাজার টন সবজি, যার বাজারমূল্য ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। উৎপাদিত সবজির বেশির ভাগই আবাদ হচ্ছে জেলার ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়ায়। একই সাথে জেলা সদরেও সবজির আবাদ বাড়ছে।
কিন্তু দুঃখজনক হলো, আমাদের কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে যে সবজি উৎপাদন করছেন তার ন্যায্যমূল্যও ঠিকমতো পাচ্ছেন না। এর জন্য প্রচলিত বাজার-ব্যবস্থাই দায়ী। আমরা এখনো একটি টেকসই কৃষি বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। ফলে প্রতিনিয়ত কৃষক তার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। লক্ষণীয়, মাঠপর্যায়ে কৃষকের কাছ থেকে কিনে ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে সবজি পাঠাতে বড় অঙ্কের অর্থ খরচ হয়ে যায়। রাজধানীতে এক ট্রাক সবজি পরিবহন খাতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়ে যায়। এতে শহরাঞ্চলে ভোক্তাপর্যায়ে দামের ব্যবধান হয় কয়েক গুণ। অথচ কৃষক সেই তুলনায় উৎপাদিত ফসলের দাম পাচ্ছেন অনেক কম।
আমরা মনে করি, এই অবস্থার অবসান ঘটাতে পারে শুধু সরকারি উদ্যোগ। যদি কৃষকের অনুকূলে একটি টেকসই বাজারব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব হয়, তা হলে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে আরো গতির সঞ্চার হবে। তাতে কৃষি অর্থনীতিতে অধিকতর প্রাণের সঞ্চার হবে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরো বেগবান হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
চিন্ময় কৃষ্ণসহ ইসকনের ১৭ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ নোয়াখালীর আ’লীগ নেতা চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার জিম্বাবুয়েকে বড় ব্যবধানে হারাল পাকিস্তান ৪ মাসে ১৪৪ কোটি ডলার বিদেশী ঋণ পরিশোধ কুলাউড়া সীমান্তে বিজিবির হাতে ৮ বাংলাদেশী আটক ‘ইসকন ভারতের দালাল ও পতিত আওয়ামী লীগের দোসর’ বাপুসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব নিলেন রেজাউল করিম বাদশাহ সংস্কারের কাজ দৃশ্যমান হলেই নির্বাচন হবে : মাহফুজ আলম সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার প্রাথমিক দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের : ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ‘রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো দল বা গোষ্ঠির নয়’ রোহিঙ্গারা এনআইডি নেয়ার অপচেষ্টা চালালে ইসিকে জানানোর আহ্বান

সকল