সরকারকে সাধুবাদ জানাই
- ১২ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
শিগগিরই বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ এক বড় অর্জন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দেশের সবচেয়ে দুর্গম অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা প্রায় সম্পন্ন। চরাঞ্চল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো। নদ-নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল টেনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। যেসব স্থানে বিদ্যুতের লাইন নেয়া দুঃসাধ্য, সেখানে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল। এভাবে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৯৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডের বাইরে পার্বত্য চট্টগ্রামের দশমিক ১৫ শতাংশ যে দুর্গম এলাকা রয়েছে, সেখানেও সোলার প্যানেলের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছানো হচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যেই শেষ হবে দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ। এর পরই দেয়া হবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী একটি জাতীয় দৈনিককে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ভুটান তার সাড়ে সাত লাখ মানুষের সবার জন্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে। এর পর ষোলো কোটি মানুষের বাংলাদেশই হতে যাচ্ছে প্রথম দেশ, যেটি শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আসছে।
২০০৮ সালে বর্তমান সরকারের রূপকল্পেই ছিল, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা। একটি সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যদি আন্তরিক হয় তাহলে কঠিন কাজও সম্পন্ন করা অসম্ভব নয়- এই সত্য প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে এই অর্জনের মধ্য দিয়ে।
এটি সত্য যে, ২০০৯ সালের আগে বিদ্যুৎসঙ্কটে জেরবার ছিল জনজীবন। অর্থনীতি ও শিল্প-বাণিজ্যে স্থবিরতার অন্যতম কারণ ছিল বিদ্যুতের অভাব। লোডশেডিংয়ে জনজীবন ছিল অতিষ্ঠ। বর্তমান সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বিদ্যুৎ খাতে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ২৭। বর্তমানে তা ১৪৬টি। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। বর্তমানে ২৫ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। গ্রাহক সংখ্যা এক কোটি আট লাখ থেকে বর্তমানে চার কোটি ১৪ লাখে পৌঁছেছে। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬০ কিলোওয়াট ঘণ্টা।
আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়নের এই বড় অর্জনের জন্য সাধুবাদ জানাই। তবে একই সাথে এ কথা উল্লেখ না করলে অন্যায় হবে যে, এই সাফল্যের পেছনে সরকারের আন্তরিকতার বিষয়টি প্রশ্নাতীত নয়। এ জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ যা মূলত জনগণের কষ্টার্জিত সম্পদ, তার যথাযথ ব্যবহার হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন না। বিপুল অর্থ অযৌক্তিকভাবে ব্যয় করা হয়েছে এই খাতে ভর্তুকির নামে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদে জানান, এর আগের ১০ বছরে সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিয়েছে ৫২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। একই বছর একটি দৈনিকের খবরে উল্লেখ করা হয়, কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই বেসরকারি কোম্পানিগুলো ১০ বছরে উঠিয়ে নিয়েছে ৫১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। ‘অলস’ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ২০১৮ সালে পিডিবি ক্যাপাসিটি চার্জ গুনেছে ছয় হাজার ২৪১ কোটি টাকা এবং ২০১৯ সালে আট হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। ভর্তুকির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা এভাবে তুলে দেয়া হয় কিছু বেসরকারি কোম্পানির হাতে। এই ভর্তুকি আদৌ যৌক্তিক ছিল কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন আছে। শুধু তা-ই নয়, ভর্তুকি দেয়ার জন্য গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হয়। ভোক্তা অধিকার সংস্থা সেই দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে বলেছিল, উৎপাদন ও বিতরণে মোট ১০ হাজার কোটি টাকা অযৌক্তিক ব্যয় আছে। সরকারের ঘাটতি আছে সাত হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। এসব অযৌক্তিক ব্যয়ের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে কেন? এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা দাম না বাড়িয়ে বিকল্প উপায় দেখিয়েছিলেন। সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি।
বিদ্যুৎ খাতের সব উদ্যোগই নেয়া হয় প্রতিযোগিতাহীন দরপত্রের মাধ্যমে। বিভিন্ন রকম অন্যায় সুবিধা ও দায়মুক্তি দিয়ে বেসরকারি খাতে বেশ কিছু তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়। খোঁজখবর নিলে দেখা যাবে, নতুন স্থাপিত বেশির ভাগ বিদ্যুৎ স্থাপনা ক্ষমতাসীন দলের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। অনেকে ধারণা করেন, বিদ্যুৎ খাতে যা কিছু করা হয়েছে তা মূলত দলীয় ব্যবসায়ীদের দিয়ে রাষ্ট্রের তহবিল লুটপাটের ব্যবস্থা। কোনো রকম জবাবদিহির ব্যবস্থার অনুপস্থিতির সুযোগে এই নজিরবিহীন কর্মকাণ্ড চলতে পেরেছে। এসব বিষয় আলোর নিচে অন্ধকারের মতো দেশের সচেতন মানুষকে পীড়িত করবে আরো বহু দিন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা