২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নির্বাচন-ব্যবস্থা ধ্বংস আর দুর্নীতি

হুদা কমিশনের দুই অর্জন

-

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ ফুরোচ্ছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় এই কমিশন। পরবর্তী কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি করতে এরই মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ করছেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু কী অর্জন নিয়ে যাচ্ছে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি? জবাবটা সহজ- নির্বাচন-ব্যবস্থা ধ্বংস আর দুর্নীতি। অর্জন বলতে গেলে এই দু’টি। সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন হলেও ইসি ক্ষমতার আজ্ঞাবহ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সঙ্গত কারণে এটিকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত ইসি বলা যেতে পারে।
এই ইসির বিরুদ্ধে নির্বাচন-ব্যবস্থা ধ্বংস ও দুর্নীতির অভিযোগ এতটাই সুনির্দিষ্ট যে, গত এক যুগে নানা কারণে প্রায় নিষ্ক্রিয় ও নীরব সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে সোচ্চার হন; রাষ্ট্রপতির প্রতি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। শুধু তাই নয়, এই ইসির বিরুদ্ধেই দেশে প্রথমবারের মতো আদালত অবমাননার রুল জারি হয়। গত ২ জানুয়ারি সিইসি কে এম নুরুল হুদাসহ ইসির ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার একটি নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশ করায় ওই রুল জারি করা হয়। নির্বাচন-ব্যবস্থা ধ্বংসের দায়ে এই ইসির সদস্যদের বিচারের দাবি উত্থাপিত হয়, যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড।
বর্তমান ইসির অধীনে পাঁচ বছরে জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ সাড়ে তিন হাজারের বেশি নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে একটিও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাও দাবি করতে পারেন না। প্রতিটি নির্বাচনই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতিটি ভোটে ইসি সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করেছে। সরকারের অনুগত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছিলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা ভোটের পর যে রেজাল্ট ইসির হাতে তুলে দেয়, সিইসি সেটিই পাঠ করেন মাত্র’।
আইন বা বিধিমালার প্রয়োজনীয় কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি হুদা কমিশন। তবে নিজের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রত্যাহারের নজিরবিহীন প্রস্তাব করেছিল। এই ইসির সবচেয়ে বড় কলঙ্ক, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচন। দিনের ভোট রাতে সেরে ফেলার সেই ঘটনা বাংলাদেশের মুখে কালিমা লেপন করে। কিন্তু এই নির্বাচন কমিশন যাদের পক্ষে এমন নিন্দনীয় নৈশভোট করেছে, সেই ক্ষমতাসীন দলও ইসির দায় নিচ্ছে না। বরং সিইসি নুরুল হুদাকেই দোষারোপ করছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচনে অনিয়ম, ব্যর্থতা ও প্রাণহানির দায় কমিশনের সদস্যরা এড়াতে পারেন না।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থতা, ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনা এবং আনুষঙ্গিক কার্যসম্পাদনের ক্ষেত্রেও নিয়মনীতি লঙ্ঘনের অজস্র অভিযোগ ইসির বিরুদ্ধে। এখন বিদায়বেলায় কমিশন সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে জবাবদিহির আওতায় আনার কথা উঠছে। শুধু তাই নয়, সিইসি কে এম নুরুল হুদা ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনে প্রেসিডেন্টের প্রতি আবেদন জানান ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক। আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগসহ ৯টি গুরুতর অভিযোগ আনেন তারা। এর ধারাবাহিকতায় গত বছর সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী ইসির দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত চেয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনেরও দ্বারস্থ হন ওই সব আইনজীবী। তাতেও কাজ হয়নি। এখন তারা আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে একটি দৈনিকের খবর থেকে জানা যাচ্ছে।
একটি দুর্বল ও আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখা ক্ষমতাসীনদের জন্যও বুমেরাং হয়েছে; তাতে সন্দেহ নেই। এ জন্যই জ্ঞানীরা বলে গেছেন, বোকা বন্ধুর চেয়ে জ্ঞানী শত্রুও ভালো। সমস্যা হলো, জ্ঞানীদের কথা এখন আর কেউ শোনে না।


আরো সংবাদ



premium cement