২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পাঁচ শতাধিক বিঘায় ফসলহানির শঙ্কা

ক্ষমতার অপপ্রয়োগ ছাড়া কিছু নয়

-

রাজধানীর অদূরে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জে বিলের কৃষিজমির মাটি বেচে দেয়ার মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতার নামে। জানা গেছে, জমির মাটি কেটে ফেলায় পাঁচ শতাধিক বিঘা ক্ষেতের ফসল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু ক্ষতির শিকার হলেও সংশ্লিষ্ট কৃষকরা প্রভাবশালী ওই নেতাদের ব্যাপারে প্রতিবাদ জানাতে পারছেন না ভয়ে। একটি সহযোগী দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সাথে ছাপানো ছবিতে দেখা যায়, সেখানে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কৃষিজমির মাটি কেটে ফেলছেন ও তা নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবেদনে এ ক্ষেত্রে দুই নেতার নাম দেয়া হয়েছে যাদের একজন স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও অপরজন যুবলীগ নেতা। উভয়ের ঠিকানা কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ডের দুর্বাটি গ্রামে। তাদের একজন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। অন্য ব্যক্তি ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তাদের সাথে মূল দলের ওয়ার্ড সভাপতির সম্পৃক্ততা থাকার কথা জানান স্থানীয় বাসিন্দারা এবং এমনকি, অভিযুক্তদের একজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু কৃষিজীবী বলেছেন, দুই-তিন মাস যাবত উল্লিøখিত দু’জনের নেতৃত্বে কালাইলের বিলে, দুর্বাটির দুই এলাকাতে যন্ত্র বসিয়ে জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। এই অপকর্ম চলছে দু-তিন বছর। দিনে ১৮-২০টি ট্রাক মাটি টানছে এবং প্রতি ট্রাক এ কাজে ট্রিপ দিচ্ছে ৮-৯ বার। ট্রাক বা লরি দিয়ে মাটি নেয়ায় রাস্তারও ক্ষতি হচ্ছে। তদুপরি, এবার এ কারণে কালাইলের বিলের সংশ্লিষ্ট কৃষিজমিগুলোতে কোনো চাষাবাদ করা যায়নি। এ ছাড়া, বিলের গভীর নলকূপটি ক্ষমতাসীন দলের ওয়ার্ড সভাপতি দ্বারা পরিচালিত। অভিযোগ, প্রতিদিন অবাধে ট্রাকযোগে জমির মাটি নেয়ার জন্যই আপাতত এটা বন্ধ। ফলে পানির অভাবে চাষাবাদ করা যায় না। অনেকেই জমির মাটি কাটতে মানা করলেও তা শোনা হয়নি। বরং তখন এতে বাধাদানকারীরা হুমকি ধমকি শুনতে বাধ্য হন।
এ দিকে, সরেজমিন দেখা যায়, দুর্বাটি উত্তরপাড়া ও বৈরাইল এলাকায় ২০-২৫ একর ফসলি জমির মাটি কাটছে এক্সকেভেটর যন্ত্র। এ কারণে জমিতে নানা স্থানে সাত-আট ফুট গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। জনৈক কৃষক বলেন, যারা মাটি কেটে নিচ্ছে, তারা বাধা পেয়ে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। একজন কৃষক জানান, মাটি নেয়ায় জমির অনেক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিবাদের মুখে নেতারা বলেছেন, মাটি কাটা শেষ হলে বড় বড় গর্ত তারা ঠিক করে দেবেন। কিন্তু গর্তের ফলে এবার আর এই জমিতে ফসল হবে না।’ দুর্বাটির এক কৃষক বলেছেন, ‘ভূমিদস্যুরা জোর করে আমার জমির মাটি বেচে দিচ্ছে। বাধা দিলে উল্টো হয়রানি ভোগ করতে হয়। এবার এখানে চাষ করা যায়নি।’ জানা যায়, লরিচালকরা পাশের জেলা থেকে এসে দিনভর মাটি কেটে উল্লিখিত দুই নেতার ব্যবস্থাপনায় রাত কাটান।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্য, লরির রাস্তা বানিয়ে ফেলায় আমার জমি অনাবাদি পড়ে আছে। এ জন্য কয়েকবার বাধা দিলেও কেউ কথা শোনেনি। তবে গভীর নলকূপটি বন্ধ রাখা হয়নি। রাতের বেলায় তা চালু থাকে। অভিযুক্ত এক নেতা বলেন, ক্ষতিপূরণ করে দিয়ে মাটি কাটছি। এতে আমি একা নই, অনেকেই জড়িত। আরেকজন অভিযুক্ত নেতা বলেন, কৃষিজমিতে মাটি জমে থাকলে তা কেটে নিলে কী ক্ষতি হবে? এ সম্পর্কে কোনো আইন আছে কি? আমি একা তো কাটছি না, নেতাদের অনেকেই তা করছেন। শুধু আমার বিষয়ে এত আগ্রহ কেন?’ উপজেলা কৃষি অফিসার গতানুগতিক ভঙিতে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে তখন ব্যবস্থা নেয়া হবে’। আর ইউএনওর আশ্বাস, ‘দ্রুত ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
আলোচ্য প্রতিবেদনে যে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে ক্ষমতার নিদারুণ অপপ্রয়োগ। জনগণের প্রতি ক্ষমতাবান সবার দায়িত্ব রয়েছে, এটা মনে রাখা চাই। অন্যথায়, জনদুর্ভোগ শুধু বাড়বে।

 


আরো সংবাদ



premium cement