২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভোটের নামে কোষাগারের বিপুল অর্থ ব্যয়

প্রাণ সম্পদহানি ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে

-

নির্বাচনে কে জিতেছে কে হেরেছে এটি কোনো খবর নয়। খবর হচ্ছে, ‘নির্বাচন’বিষয়ক সহিংসতায় কতজন প্রাণ হারাল। আরো খবর হচ্ছে, মূলত ক্ষমতাসীন সরকারপক্ষ কাকে কিভাবে মনোনয়ন দিলো। একটি নমিনেশন পাওয়ার জন্য দলীয় লোকেরা মরিয়া। নমিনেশন পাওয়া মানে নির্বাচিত হয়ে যাওয়া। আর স্থানীয় সরকারের একটি পদ বাগিয়ে নিতে পারলে অনিয়ম-দুর্নীতি করে বিপুল অর্থ ক্ষমতা প্রতিপত্তি অর্জন করা যায়। তবে কৌশলটাও এখন পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিদের চেয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর জয়ের পাল্লøা ভারী হয়ে যাচ্ছে। কারণ, মানুষ আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে বিদ্রোহীদের পতকাতলে জড়ো হচ্ছে। কারণ ভিন্ন দলের কেউ এখন আর নির্বাচনে সুবিধা করতে পারে না। কিন্তু বিদ্রোহী হলে প্রশাসনের শক্তিতে মূল আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে রুখে দিতে পারে। অন্য দিকে, সাধারণ মানুষও বিকল্প হিসেবে তাকে ভোট দেয়। শেষ ধাপের ইউপি নির্বাচনে দেখা গেল, স্বতন্ত্র নামের মূলত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়ের পাল্লা ভারী।
শেষ ধাপের নির্বাচনেও সহিংসতার আগের চিত্রই অব্যাহত ছিল। প্রতিদিন ক্ষমতাসীন দলের বিবদমান পক্ষগুলোর আক্রমণ হামলায় ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে এই ইউপি নির্বাচনে এ পর্যন্ত ৮৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নির্বাচন-পরবর্তীতে জয়ী ও পারজিত প্রার্থীরা বিদ্বেষবশত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, পরাজিতরা নিজেরা প্রাণঘাতী সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। শরিয়তপুরের নড়িয়ায় নির্বাচনের পর এক পরাজিত মেম্বার তার বাহিনীসহ হামলা করে আরেক পরাজিত প্রার্থীর ওপর। দল বেঁধে তাকে পিটিয়ে মেরেছে। মূল কথা হচ্ছে, একজন নিজের পরাজয়ের দায়ী করছে অন্য পরাজিত প্রার্থীকে। মূলত ইউপি নির্বাচনে এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এর পরিণতি আরো বহু দূর গড়াবে। স্থানীয়ভাবে এর দ্বারা বহু মানুষের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতা বাড়াচ্ছে। এবারের বিনা ভোটের এ নির্বাচনের আরেকটি ক্ষতিকর দিক এটি।
এ জন্যই নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার মন্তব্য করেছেন, ‘এখন ভোটযুদ্ধ আছে, ভোট নেই’। তিনি আরো বলেন, ইউপি নির্বাচনে উৎসবের বাদ্যের বদলে বিষাদের করুণ সুর বাজছে। নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসাথে চলতে পারে না। এর আগে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে এই নির্বাচন কমিশনার আরো কঠিন মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ভোট এখন আইসিইউতে, গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’। একজন নির্বাচন কমিশনার যখন নিজেদের ব্যবস্থাধীনে আয়োজিত নির্বাচন নিয়ে এমন রূঢ় মন্তব্য করেন সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বলতে আর কিছুই থাকে না। এখন যারা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে মেম্বার-চেয়ারম্যান হয়ে যাচ্ছেন তারা প্রকৃতপক্ষে জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত হচ্ছেন না। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সব জায়গায় ভোটবিহীন প্রতিনিধি নির্বাচনের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একে কোনোভাবেই গণতন্ত্র চর্চা বলা যায় না।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, সমাজ একটি দুষ্টচক্রে আবদ্ধ হয়ে গেছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, নির্বাচন নয় ভোট ছিনতাই হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের অবস্থা হবে আরো ভয়ঙ্কর। এমনকি তিনি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করায় বর্তমান ও সাবেক প্রধান দুই নির্বাচন কমিশনারের বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন।
এই প্রহসনের নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বিপুল অর্থ খরচ করা হচ্ছে। এটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব এ ধরনের নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement