২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পাইকগাছায় সড়কের কাজ বন্ধ

জনদুর্ভোগ লাঘব করুন

-

খুলনা বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে চার কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পাইকগাছা পৌর সদরের পূর্ব ওয়াপদা থেকে উপজেলার লতারহাট পর্যন্ত সড়কের নির্মাণকাজ পায় ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতি ও অবহেলায় গত চার বছরেও শেষ হয়নি পাইকগাছার ওই সড়কের ছয় কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নামেমাত্র ৩৫ শতাংশ কাজ করে অজ্ঞাত কারণে বেশির ভাগ কাজ ফেলে রেখেছে। এতে করে সেখানকার দুই ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। নয়া দিগন্তে প্রকাশিত পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতার পাঠানো এক প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা গেছে।
সবার জানা, যেকোনো উন্নয়নের লক্ষ্য হলো জনসাধারণের জীবনযাত্রা অধিকতর সহজ করা। নাগরিকদের সুবিধা বাড়াতে নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প; বিশেষ করে অবকাঠামোগত প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। কিন্তু সেই উন্নয়নকাজ যখন জনদুর্ভোগে পরিণত হলে তা দুঃখজনক। তবে আমাদের দেশে এমন প্রকল্প রয়েছে ভূরি ভূরি। খুলনার পাইকগাছায় নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর পরিত্যক্ত সড়কটিও এসব প্রকল্পের নতুন সংযোজন মাত্র।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্র মতে, কার্যাদেশ পেয়ে ২০১৮ সালের পয়লা অক্টোবর থেকে রাস্তাটির কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ অনুযায়ী নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তাটি খোঁড়াখুঁড়ির পর নামমাত্র কাজ করে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। রাস্তাটি খুুঁড়ে রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ না করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। রাস্তা খননের পর সরু খালের মতো হয়েছে। সেসব স্থানে কিছু খোয়া ঢালাই দেয়া হলেও বেশির ভাগ স্থান উন্মুক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও বছরের পর বছর ইট-খোয়া-বালু ফেলে রাখা হয়েছে। এতে করে চরম ঝুঁকি নিয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়ে বেহাল সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন সীমাহীন দুর্ভোগ সঙ্গী করে যাতায়াত করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
পাইকগাছার ওই প্রত্যন্ত এলাকার হাজার হাজার মানুষের উপজেলা সদরে চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। নির্মাণাধীন সড়কে কোনো রকমে মানুষ যাতায়াত করতে পারলেও বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টিতেই পানি-কাদায় রাস্তাটি একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় গত বর্ষা মৌসুমে ওই অঞ্চলের অধিবাসীদের যাতায়াত প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়ে। সঙ্গত কারণে অতি প্রয়োজন ছাড়া এ সড়কে এখন আর এলাকার কেউ চলাচল করেন না।
সড়কটি খুলনা বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে থাকায় কাজটির দেখাশোনা করে খুলনা জেলা প্রকৌশলীর দফতর। এই প্রকল্পের বিষয়ে খুলনা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন- নির্দিষ্ট সময়ে কাজটি শেষ না করতে পারায় মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশনের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। কাজের পরিমাণ হিসাব করে প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) অফিসে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে পুনঃদরপত্র আহ্বান করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগপূর্বক সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের কথা বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অর্ধলাখ মানুষের যাতায়াতের পথটি দ্রুত নির্মাণের উদ্যোগ নেবে। এ জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করা। একই সাথে যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পাবে, সেই প্রতিষ্ঠান যাতে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে তা তদারকি করতে হবে। তবেই সম্ভব হবে দ্রুত ওই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করা। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শতভাগ আন্তরিকতা দেখাতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement