সর্বত্র প্রিপেইড মিটার বসানো হোক
- ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
গ্যাস ব্যবহার না করেই তিতাসসহ ছয় বিতরণ কোম্পানির আবাসিক গ্রাহকদের বছরে পরিশোধ করতে হচ্ছে বাড়তি প্রায় ২২ শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক তিতাসের গ্রাহকরাই বাড়তি পরিশোধ করছেন দেড় হাজার কোটি টাকা। গ্যাস ব্যবহারের তুলনায় মাসে একজন আবাসিক গ্রাহক প্রায় ৪৭৫ টাকা বাড়তি পরিশোধ করছেন। অতিরিক্ত টাকা জমা হচ্ছে গ্যাস বিতরণে নিয়োজিত তিতাসসহ ছয়টি কোম্পানির কোষাগারে। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটির অধীনে ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির আবাসিক গ্রাহকসংখ্যা ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৮০৯টি। প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে তিন লাখ ৫৮ হাজার ৪৩২টি। ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৭ গ্রাহক এখনো পাইপলাইন থেকে সরাসরি গ্যাস ব্যবহার করেন। লক্ষণীয়, প্রতি মাসে যেভাবে বিল নির্ধারণ করা হয়; বাস্তবে একজন গ্রাহক মাসে তার চেয়ে কম গ্যাস ব্যবহার করেন। যখন মিটারের আওতায় আনা হয়, তখন গ্রাহক প্রকৃত ব্যবহারের ওপরই বিল পরিশোধ করেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সূত্র মতে, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো পাইপলাইনের গ্রাহকদের কাছ থেকে মাসিক বিল ধার্য করে। এক চুলা থেকে প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ যে পরিমাণ গ্যাস বের হওয়া সম্ভব; তার পুরোটা ধরা হয়। এক চুলায় দৈনিক ১০ ঘণ্টা এবং দুই চুলায় দৈনিক আট ঘণ্টা জ্বলার হিসাবে ২৬ দিন দিয়ে গুণ করা হয়। এর সাথে ‘ডাইভারসিটি ফ্যাক্টর’ গুণ করে সঞ্চালন ও বিতরণ মাশুল এবং মূল্য সংযোজন কর, ভ্যাটসহ মোট গ্যাস বিল নির্ধারণ করা হয়। এখন মিটারযুক্ত কোনো গ্রাহক যদি দৈনিক ১০ ঘণ্টার স্থানে পাঁচ ঘণ্টা চুলা জ্বালান তার গ্যাস খরচ স্বাভাবিকভাবেই অর্ধেক কমে যায়। বর্তমানে আবাসিক খাতে এক চুলায় প্রতি মাসে বিল ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলায় ৯৭৫ টাকা। প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১২ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। সে হিসাবে পাইপলাইনের দুই চুলার একজন গ্রাহক মাসে ৭৭ দশমিক ৩৮ ঘনমিটার গ্যাসের বিল দিচ্ছেন। বাস্তবে একজন গ্রাহক মাসে সর্বোচ্চ গ্যাস ব্যবহার করেন ৩৯ মিটার। কিন্তু বিতরণ কোম্পানিগুলো বিল নির্ধারণ করে ৭৭ দশমিক ৩৮ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার ধরে। ফলে মিটার সংযোজনকারী একজন গ্রাহক মাসে সর্বোচ্চ বিল দিচ্ছেন ৪৯২ টাকা, বিপরীতে মিটারবিহীন একজন গ্রাহককে মাসে বিল দিতে হচ্ছে ৯৭৫ টাকা।
গ্যাসের অপচয় রোধ, গ্রাহকসাশ্রয়ী করা ও সিস্টেম লস কমাতে ২০১৬ সালে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। প্রথমে দুই লাখ গ্রাহককে এ মিটারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৮ সালে বিইআরসি গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় প্রিপেইড মিটার স্থাপনের আদেশ জারি করে। এরপর বিতরণ কোম্পানিগুলো কাগজে-কলমে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করে। অবস্থাদৃষ্টে এ কথা বলা অসমীচীন নয় যে, দেশের সব গ্যাস ব্যবহারকারী গ্রাহক কবে নাগাদ প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসবেন বলা মুশকিল। এর কারণ প্রিপেইড মিটার সর্বত্র চালু হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন যেভাবে গ্রাহকদের পকেট কাটছে তা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বর্তমান অবস্থা বহাল রাখতে সরকারি পর্যায় থেকেই যে চেষ্টা করা হবে তা সহজেই অনুমেয়।
আমাদের সবার জানা, দেশে সরকারি পরিষেবা মানসম্পন্ন নয়। বিশেষ করে ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ অতীতেও যেমন ছিল, এখনো এতটুকু কমেনি। বরং দিন দিন অসন্তোষের মাত্রা বাড়ছে। এর পেছনে যে কারণ বিদ্যমান তা হলো- সরকার নাগরিকদের পরিষেবা দিতে যত না আগ্রহী; তার চেয়ে বেশি ব্যবসায় করতে চায়। সবার চাওয়া, অন্তত গ্যাস সরবরাহ সর্বত্র প্রিপেইড মিটারে চালু করে নাগরিক পরিষেবার ক্ষেত্রে সরকার আন্তরিকতার পরিচয় দেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা