মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি
- ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
আগে তারা বনের গাছপালা কেটে সব উজাড় করে দিতেন জীবিকার তাগিদে। এখন সেসব না করে, গোলমরিচ চাষে মন দিয়েছেন। দিন দিন ফলন ও আবাদ বাড়ছে এর। তাই তারা উৎসাহিত হয়েছেন ব্যাপকভাবে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের উপজেলা মিরসরাইতে এ ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। স্থানটি হলো পাহাড়ঘেরা করেরহাট ইউনিয়নের ‘কয়লা’ এলাকা। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড় ও খাগড়াছড়িগামী মহাসড়কের অদূরেই। ঢাকা-চাটগাঁ পুরনো মহাসড়কও (ছাগলনাইয়া হয়ে) কাছে। মিরসরাই প্রতিনিধি সচিত্র প্রতিবেদনে গোলমরিচে এলাকাবাসীর জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসা তুলে ধরেন পয়লা জানুয়ারির নয়া দিগন্তে। সংশ্লিষ্ট ছবির ক্যাপশন, ‘মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নে চাষ হচ্ছে গোলমরিচ। প্রতিটি গাছে এসেছে ফল।’
জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুলাইতে ২০ জন চাষিকে ট্রেনিং দিয়ে একটি সমাজ উন্নয়ন সংগঠন কাজ শুরু করে এ ব্যাপারে। তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছিল দেশীয় দাতা সংস্থা ‘পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন’ বা পিকেএসএফ। এরপর স্থানীয় কয়লা গ্রামে ১১টি প্লটে এবং পাশে অবস্থিত ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের ৯টি প্লটে গোলমরিচের আবাদ শুরু করা হয় বাণিজ্যিকভাবে। প্রশিক্ষণ দেয়া ছাড়াও আগে উল্লিখিত সমাজ উন্নয়ন সংস্থা ‘অপকা’ চারা, কীটনাশক ও খুঁটি সরবরাহ করেছে। সব প্লটেই ফল এসেছে গোলমরিচগাছে। স্থানীয় বাজারে কেজি-প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় তা বিক্রি করা হয়। চলতি বছরে ১০ হাজার কেজি কাঁচা গোলমরিচ প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে। শুকালে এর ওজন হবে সাড়ে তিন হাজার কেজির মতো। তা হলে দাম পড়বে ২১ লাখ টাকা। গোলমরিচ চাষ স্থানীয় পাহাড়ের অধিবাসীদের জীবনযাত্রা ও মানে অনেক রূপান্তর এনেছে গত তিন বছরে। গতবার ৭০ কেজি গোলমরিচ ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল। এ বছর এর ফলন বেড়েছে।
কয়লা জনপদের বাসিন্দারা আগে বনের কাঠ বিক্রি করতেন জীবিকার তাগিদে। স্থানীয় বেশির ভাগ লোকের এটাই ছিল পেশা। এ দিকে শেষ হয়ে যাচ্ছিল বনবাদাড়। পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পুরুষরা চোলাই মদ তৈরি ও বিক্রিও করতেন। এখন আর এসব করতে হয় না গোলমরিচ চাষ করায়। গোলমরিচ চাষ হয় আধা ছায়াযুক্ত স্থানে এবং পাহাড়ি ঢালে। এর প্রতি প্লটের পরিমাণ ২৫ শতক। প্রতি খুঁটিতে চারটি করে চারা রোপণের দুই বছর পর ফল আসা আরম্ভ হয়। সঠিক পরিচর্যায় ২০-২৫ বছর গোলমরিচ পাওয়া যায়। চারটি গাছে ফলে সাত-আট কেজি কাঁচা গোলমরিচ। সেদ্ধ করে শুকালে তা তিন-চার কেজি হয়ে যায়। এর ফল পাকতে লাগে ছয় মাস। পানির সঙ্কট দূর হলে গোলমরিচগাছ মরে না। গভীর নলকূপ থাকলে গোলমরিচ চাষ বাড়ানো যায় বলে কৃষিজীবী শ্রীকান্ত ত্রিপুরা বলেছেন।
অপকা’র এক কর্মকর্তা জানান, ইউনিয়নদ্বয় পাহাড়ি হওয়ায় বহুলাংশে ছিল অনাবাদি। তাই পাহাড়ের ঢালু স্থানে গোলমরিচের আবাদে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, ‘ঢালু জায়গায় এর চাষ হয় ভালো হয়। দেশের পঞ্চগড় ও শ্রীমঙ্গলে গোলমরিচ চাষ হচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে। এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ সর্বপ্রথম মিরসরাইতে। স্থানীয় এনজিও অপকা প্রশিক্ষণ, চারা, সরঞ্জাম ইত্যাদি সরবরাহ করেছে। উপজেলা কৃষি অফিসও পরামর্শ দিয়েছে।’ এ কর্মকর্তা গোলমরিচ চাষের পাইলট প্রকল্প সারা দেশে নেয়া, বয়লার মেশিন স্থাপন এবং গভীর নলকূপ বসানোর ব্যাপারে উপরে জানাচ্ছেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
আমাদের প্রত্যাশা, এ ব্যাপারে অবিলম্বে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হবে, যাতে আত্মকর্মসংস্থান দ্বারা দারিদ্র্যমোচন ঘটে এবং মানুষ প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা