২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক গতি ফিরছেই না

নতুন বছরও আংশিক কার্যক্রম দিয়ে শুরু

-

অতিমারী করোনাকালে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কী ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে, তা বোঝা যায় ইউনিসেফের তথ্যে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গত বছর গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হওয়ার প্রেক্ষাপটে ইউনিসেফ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিশ্বব্যাপী করোনার কারণে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এমন দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বিগত দুই বছর পাবলিক পরীক্ষা এসএসটি-এইচএসসি কিভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা থেকেও বুঝতে অসুবিধা হয় না, আমাদের শিক্ষাকার্যক্রম যাদের দিয়ে পরিচালিত তাদের যোগ্যতা ও সক্ষমতা কতটুকু। অবস্থাদৃষ্টে এ কথা বলা অসঙ্গত নয় যে, শিক্ষাকার্যক্রমে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা এখনো স্পষ্ট নন, শিক্ষাকার্যক্রমে স্বাভাবিক গতি কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায়।
বাস্তবতা হলো- করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবার ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ নেই। তবে সাড়ে তিন কোটি মুদ্রণ বাকি রেখেই নতুন বছরের প্রথম দিন পয়লা জানুয়ারি থেকে শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে এবার ১৩ দিন ধরে এ কার্যক্রম চলবে। সেই হিসাবে ১৩ জানুয়ারি নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে শেষ হবে বই বিতরণ। এ দিকে শিশুরা নতুন বই পেলেও আরো অন্তত তিন মাস পুরোদমে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ থেকে শিশুদের রক্ষার্থে এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। নতুন বছরের ক্লাস ও পাঠ পরিকল্পনা গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরও (ডিপিই) দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক স্তরের সিদ্ধান্ত জানাবে। উভয় স্তরই প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত আগের মতো আংশিক শ্রেণিকার্যক্রম চালাবে। তবে পঞ্চম, দশম এবং এসএসসি-দাখিল পরীক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পাবে। তাদের সপ্তাহের প্রতি কর্মদিবসেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হবে।
নতুন বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য নতুন পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুসরণের জন্য কোন ধরনের রুটিন অনুসরণ করতে হবে তা বৃহস্পতিবার রাতেই মাউশির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত অফিস আদেশে বলা হয়, ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে প্রতিদিন চারটি বিষয়ের ওপর ক্লাস নেয়া হবে। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে প্রতিদিন (বিদ্যালয় খোলা থাকা সাপেক্ষে) ক্লাস হবে এবং দিনে তিনটি বিষয়ের ক্লাস নেয়া হবে। অষ্টম ও নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে দু’দিন তিনটি করে বিষয়ের এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে এক দিন তিনটি বিষয়ের ক্লাস নেয়া হবে। পৃথক আরেক চিঠিতে, ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরও সপ্তাহে চার দিন ক্লাস নিতে রুটিন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আপাতত এ রুটিন চলবে। পরে অবস্থা অনুযায়ী ক্লাস সংখ্যা বাড়ানো বা কমানো হবে। অন্য দিকে দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিকের রুটিনও প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। দুই ধরনের রুটিন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, জরুরি পরিস্থিতি উদ্ভব হলে কেমন করে পাঠকার্যক্রম চালানো হবে। আরেকটি হচ্ছে, এখন যেভাবে চলছে তা চালিয়ে নেয়া। পরিকল্পনায় আপাতত গত সেপ্টেম্বর থেকে অনুসৃত নীতিই অনুসরণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদেরও সপ্তাহে এক দিন স্কুলে আনা যায় কি না তা ভাবা হচ্ছে।
শিক্ষাবিদদের মতো আমরাও মনে করি, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনতে হলে পুরোদমে পাঠকার্যক্রম কিভাবে শুরু করা যায়, তা নিয়ে একটি পরিকল্পনা করার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে করোনা-পরবর্তী বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই এগোতে হবে। এর জন্য অতি দ্রুত সব শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের পূর্ণমাত্রায় পাঠকক্ষে ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে এ জন্য জাতিকে খেসারত দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement