অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাবের শঙ্কা
- ০১ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
এক কোটির মতো বাংলাদেশী বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তাদের কষ্টার্জিত আয় দেশে পাঠান। দেশের অর্থনীতিতে সেই প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের গুরুত্ব অপরিসীম। করোনাকালেও দেশে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে। এ সময় প্রবাসীদের পাঠানো আয় বেশি এসেছে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে প্রবাসীরা ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ১৯৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। ওই অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যা দুই লাখ ১০ হাজার ৬১১ কোটি টাকার বেশি। এর আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার। এ হিসাবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬৫৭ কোটি ডলার বা ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। একক অর্থবছরে এর আগে কখনো এত রেমিট্যান্স আসেনি। রেমিট্যান্সপ্রবাহে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সূচনা হয় ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে। ওই অর্থবছর থেকে সরকার প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ঘোষণা করে। শুধু সরকারি ২ শতাংশ প্রণোদনাই নয়, বেশ কয়েকটি ব্যাংক এই ২ শতাংশ প্রণোদনার অতিরিক্ত আরো ১ শতাংশ অর্থ রেমিট্যান্স প্রাপকদের দিয়ে আসছে।
কিন্তু এই প্রণোদনার পরও করোনা-পরবর্তীতে কয়েক মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ অনেক কমেছে। অবশ্য, এর কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা দায়ী করেছেন হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানো বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে। পাশাপাশি করোনাকালে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক বিদেশ থেকে দেশে চলে আসেন। মূলত তারাই বিদেশে গচ্ছিত তাদের অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে নিয়ে আসেন। যার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায় রেমিট্যান্সপ্রবাহে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর এ পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৬১ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল এক হাজার ৯০ কোটি ডলার। অর্থাৎ এই পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স হ্রাস পেয়েছে ২২৯ কোটি ডলার বা ১৯ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি কমেছে, যা বিগত ১৮ মাসের সর্বনিম্ন। নভেম্বরে ১৫৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা অক্টোবরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম। সেই সাথে এটি গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় ২৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বা ৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার কম। গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।
রেমিট্যান্সপ্রবাহে ধস ঠেকাতে এবার প্রণোদনার পরিমাণ বাড়িয়ে আড়াই ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে এই নতুন হারে প্রণোদনা দেয়া হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনা খাতে চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রণোদনা বাড়ানোর কারণে আগামী অর্থবছরে এ খাতে আরো আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।
শুধু প্রণোদনা বাড়িয়ে প্রবাসী আয়প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার দক্ষ জনশক্তি রফতানি বাড়ানো। এতে সহজে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশে পাঠাতে পারবেন প্রবাসীরা। শুধু শ্রম বিক্রি করে কাক্সিক্ষত অর্থ দেশে পাঠানো সম্ভব নয়। কিন্তু সরকার প্রবাসী আয় পেতে যত না উদগ্রীব; বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে তেমন আগ্রহী নয়। তা হলে দক্ষ জনশক্তি গড়তে কর্মমুখী প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিত। সে পথে না হেঁটে তাৎক্ষণিকভাবে লাভবান হতে সহজ উপায় হিসেবে প্রণোদনা বাড়ানো হচ্ছে। এতে কতটুকু ফল দেবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে, প্রবাসী আয় কমে গেলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এতে সন্দেহ নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা