২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার নিয়ে দুর্নীতি

‘সবার জন্য শিক্ষা’র এই হাল কেন?

-

বহু বছর থেকে দু’টি স্লোগান আমাদের বাংলাদেশে বিশেষত সরকারি কর্মকর্তাদের মুখে মুখে। সেগুলো হচ্ছে- ‘সবার জন্য শিক্ষা’ এবং ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’। কিন্তু আজো স্লোগানগুলো তেমন বাস্তবায়ন হয়নি। আর প্রধানত দুর্নীতি ও অনিয়ম, তথা আত্মসাৎ, অপচয় ও স্বজনপ্রীতি যে, এর মূল কারণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি জাতীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত মাদারীপুরের ঘটনা তার নমুনা মাত্র। একটি সহযোগী দৈনিক জানায়, সেখানে সদর উপজেলার ৫৯টি প্রাইমারি স্কুলের প্রকল্পের অর্থ নিয়ে নানা প্রকার দুর্নীতি ও অনিয়ম করা হয়েছে। যেখানে আসলেই সংস্কার দরকার, সেখানে অর্থ বরাদ্দ হয়নি। অভিযোগ এসেছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ছাড়াও কয়েকজন প্রধান শিক্ষকও এতে জড়িত।
পত্রিকাটির মাদারীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন এ সংবাদ। আলোচ্য প্রতিবেদনের সাথে যেসব ছাবি রয়েছে, তাতে দেখা যায়, কলাগাছিয়া গভর্নমেন্ট প্রাইমারি স্কুলের বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও এর জন্য কোনো বরাদ্দ মেলেনি। অথচ সুদৃশ্য বহুতল ভবনের অধিকারী বিদ্যালয় অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে। যেসব স্কুলের সংস্কার প্রয়োজন, তার বদলে অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। তদুপরি, চলমান মহামারীর দরুন স্কুল বন্ধ থাকায় অর্থ নিয়ে ‘নয়ছয়’ করা হয়েছে বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে।
সদর উপজেলার সংশ্লিষ্ট অফিসারের কার্যালয় সূত্রে প্রকাশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় সংস্কারের জন্য দুই লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে স্কুলের সংস্কারের উদ্দেশ্যে; কিন্তু স্থানীয় ক্লাস্টার কর্তা প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে কোনো কাজ ছাড়াই বিল তুলে টাকা ‘মেরে দিয়েছেন’ বলে গুরুতর অভিযোগ এসেছে। এ দিকে মাদারীপুর জেলা শহরে কুলপদ্বী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, পুরো নতুন এক ভবনের জন্য এবার জুন মাসে দুই লাখ টাকা এর ক্ষুদ্র সংস্কারের নামে বরাদ্দ করা হয়েছে। অথচ সদর উপজেলার পূর্ব কলাগাছিয়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ক্লাসরুমের অভাবে টিনের ঘরে ক্লাস নিতে হয়। এ দিকে মূল ভবনের প্লাস্টার খসে পড়ছে; অথচ তারা কোনো বরাদ্দ পায়নি। এর বিপরীতে, এমন স্কুলও একাধিক আছে যেখানে পুরো ভবনই নতুন বলে কয়েক বছরেও সংস্কার দরকার হবে না। কিন্তু তারা অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে। কলাগাছিয়ার প্রধান শিক্ষক দুঃখ করে বললেন, ‘আমাদের ক্লাসরুম সঙ্কট দীর্ঘ দিন চলছে। তদুপরি, ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ায় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই স্কুল সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি। অথচ আমরা এই বিষয়ে প্রকল্পটির কথাই জানি না।’ কুলপদ্বী সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘রঙ করা, টাইলস স্থাপন, টব কেনা ইত্যাদির পেছনে খরচ করতে হয়েছে। তাই আমাদের জন্য আরো বরাদ্দের দরকার।’ বরাদ্দ পেয়েছে, এমন একটি মডেল প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দাবি, ‘কোনো অনিয়ম হয়নি আমাদের এখানে; বরং বেশি টাকা ভবনের সংস্কারে ব্যয় করেছি।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘এই প্রকল্পের বরাদ্দ পছন্দমতো স্কুলে দেয়ার কথা জানি না। কোনো কোনো স্কুল বরাদ্দ পেতে পারে, কিন্তু অনিয়মের কারণে তারা অর্থ পায়নি, নির্দিষ্টভাবে জানা প্রয়োজন। খোঁজ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ সত্য পেলে ব্যবস্থা নেবো।’
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর প্রাথমিক শিক্ষা এর ভিত্তি। তাই ‘সবার জন্য শিক্ষা’ সুনিশ্চিত করার স্বার্থে এ বিষয়ে সব অভিযোগের জরুরি প্রতিকার আবশ্যক।

 


আরো সংবাদ



premium cement