উন্নয়নের ডঙ্কার সাথে বেমানান
- ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
মহামারীর প্রকোপ কিছুটা কমে এসেছে। সেই সাথে বিশ্বজুড়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। অবৈধভাবে বিপজ্জনক উপায়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করতে গিয়ে নানা ধরনের হয়রানি, ভোগান্তি এমনকি মৃত্যুরও শিকার হচ্ছেন তারা। তারপরও এই প্রক্রিয়া থেমে নেই; বরং ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক একটি দৈনিকের খবর অনুযায়ী, চলতি বছর যত মানুষ বিদেশে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তাদের মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। খবরে বলা হয়েছে, এ বছর সবচেয়ে বেশি শরণার্থী এসেছে উত্তর-আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া থেকে। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান। বিশ্বের মোট শরণার্থীর রওনা ১১ শতাংশের বেশি ছিলেন বাংলাদেশী।
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে বিপুল ডঙ্কা বাজানো হয় এ তথ্য তার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে, বাংলাদেশ থেকে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে হলেও বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। বিদেশে গিয়ে সবাই যে কাক্সিক্ষত উন্নত জীবনের দেখা পাচ্ছেন; তা কিন্তু নয়। জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসাবে, ২০২১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত আনুমানিক এক লাখ ৯ হাজার ৭২৬ জন শরণার্থী ইউরোপে পৌঁছাতে পেরেছেন। একই সময়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত দুই হাজার ৫৪৩ জন। তারপরও অবৈধ অভিবাসন চেষ্টার কমতি নেই। কিন্তু বাংলাদেশীরা কেন বিদেশে পাড়ি জমাতে চান?
সবার জানা, এর প্রধান কারণ-দেশে বিপুল বেকারত্ব। এমনিতেই চাকরির বাজার ছোট। তার ওপর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাওয়ার সব পথ বন্ধ। দলীয়করণের ফলে মেধাবীরাও চাকরি নামের ‘সোনার হরিণের’ দেখা পান না। এর সাথে রয়েছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার পরীক্ষা। বিরোধী দলের রাজনীতির সাথে পরিবারের কোনো সদস্যের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেই এমনকি বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাও নিয়োগ পাননি এমন দৃষ্টান্ত অনেক। উৎকোচ দিয়ে কেউ কেউ চাকরি পেলেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। তদবিরবাজি, পদে পদে দুর্নীতি আর হয়রানির কারণেও অনেকে নিরুপায় হয়ে শেষ সম্বল বিক্রি করেও বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এটিকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন না বলে বরং বেঁচে থাকার শেষ প্রাণান্ত প্রয়াস বলাই সঙ্গত বলে আমরা মনে করি।
তবে বলা দরকার, এর সাথে আঞ্চলিক কিছু বিষয়ও যুক্ত। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে জাতিগত নির্মূলের শিকার রোহিঙ্গাদের মরিয়া হয়ে বেঁচে থাকার প্রশ্নটিও এর সাথে বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ মিয়ানমার সরকারের চরম দমন-পীড়নের মুখে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। সেই রোহিঙ্গাশিবিরের অনিশ্চিত জীবন থেকে বেরিয়ে অনেকে বিদেশে পাড়ি জমাতে চান। আর তাদের উৎস দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম জড়িয়ে যায়। ইউএনএইচসিআর জানায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত অন্তত তিন হাজার ৪৬ জন রোহিঙ্গা আন্দামান ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করে, যাদের দুই-তৃতীয়াংশই ছিল নারী ও শিশু।
একইভাবে বাংলাদেশীরাও অবৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এটা করতে গিয়ে দেশে ও বিদেশে নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে অনেকে ধরা পড়ছেন। কিন্তু এভাবে এই প্রক্রিয়া বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার দেশে চাকরির বাজার সম্প্রসারণ, সংবিধান অনুযায়ী কর্মসংস্থানে ধর্ম-বর্ণ-রাজনীতি নিরপেক্ষভাবে প্রতিটি নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য ঋণদান, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈষম্য দূর করে এর সুফল সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা।
সেই সাথে মানবপাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাও জরুরি; কিন্তু বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের বিবেচনায় এসব বিষয় আছে বলে মনে হয় না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা