দরকার উন্নয়নে ভারসাম্য
- ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
দেশে গ্রাম-শহরের উন্নয়নে বৈষম্য দিন দিন পাহাড়সম হয়ে উঠেছে। লক্ষণীয়, দেশের জাতীয় বাজেটের বেশির ভাগ অর্থই ব্যয় হয় শহরাঞ্চলের উন্নয়নকাজে। আনুপাতিক হারে গ্রামের অবকাঠামোসহ নানা ধরনের উন্নয়ন সমভাবে হয় না। এর কারণ এখনো দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঔপনিবেশিক আদলেই ঘুরপাক খাচ্ছে। বর্তমান সময়ে গ্রাম থেকে টাকা সংগ্রহ করে শহরে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ করে প্রায় পুরোটাই শহরাঞ্চলে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাম থেকে আমানত সংগ্রহ ও বিনিয়োগের এমন চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হালনাগাদ পরিসংখ্যানে।
পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত এসেছে ২২ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা; কিন্তু গ্রামে বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ৩৭৭ কোটি টাকা। মোট আমানতের মধ্যে বিনিয়োগ হয়েছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রাম থেকে আমানত সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৮০২ কোটি টাকা, যেখানে গ্রামে বিনিয়োগ করা হয়েছে মাত্র ২৪৮ কোটি টাকা, যা মোট গ্রামীণ আমানতের ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আহরিত আমানতের ৭৮ শতাংশই গ্রামীণ, আর এজেন্টের প্রায় ৮৬ শতাংশই গ্রামের। দেখা যাচ্ছে, গত অক্টোবর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানতের স্থিতি রয়েছে ২২ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত বেড়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। এর মধ্যে আলোচ্য সময়ে গ্রামীণ আমানতের স্থিতি হয়েছে ১৭ হাজার ৮০২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১০ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। গ্রামীণ আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ।
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত তুলে আনা হচ্ছে; কিন্তু কাক্সিক্ষত হারে বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে আরো পিছিয়ে পড়ছে গ্রামের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। অথচ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স দেয়ার অন্যতম উদ্দেশ্যই ছিল গ্রামের প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজনের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া। তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভেতরে নিয়ে আসা। এর অর্থ, শুধু গ্রামীণ জনগণের কাছ থেকে আমানতই সংগ্রহ করা হবে না, পাশাপাশি গ্রামের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে; কিন্তু সে উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ আমানত নেয়া হচ্ছে; তা থেকে কোনো কোনো ব্যাংক নামমাত্র ঋণও বিতরণ করছে না। গ্রামীণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগও ব্যাংকমুখী হচ্ছে না। তবে আশার কথা হলো-বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এখন নতুন নতুন এজেন্ট ব্যাংকিং ও আউটলেট অর্থাৎ উপশাখার লাইসেন্স দেয়ার সময় অন্যতম শর্তই দেয়া হচ্ছে-এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করতে হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হলে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। একজন গ্রাহক স্বাবলম্বী হলে তার অর্থনৈতিক লেনদেনও বাড়ে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে ব্যাংক খাতে। কারণ ওই গ্রাহক ব্যাংকের মাধ্যমেই লেনদেন করে থাকেন। ফলে ব্যাংকের লেনদেন বেড়ে যাবে। এ কারণেই গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো শক্তিশালী করা এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ আমানত নেয়া হয় তার বেশির ভাগই তাদের মধ্যে বিতরণ করা প্রয়োজন। তা না হলে শহর এবং গ্রামের মধ্যে বৈষম্য আরো বাড়বে বৈ কমবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা